‘অনাহারে মৃত্যু হতে পারে লাখো মানুষের’

| বৃহস্পতিবার , ৯ জুন, ২০২২ at ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়া যদি কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের বন্দরগুলো খুলে না দেয় তবে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ খাদ্যের অভাবে মারা যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে ইতালি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক বৈঠকে গতকাল বুধবার ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইগি দি মারিও একথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।

দি মারিও বলেন, শস্য রপ্তানি বন্ধ করার অর্থ লাখ লাখ শিশু, নারী ও পুরুষকে জিম্মি করা এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া। ওই বৈঠকে ভূমধ্যসাগরীয় আও কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মারিও আরও বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করা রাশিয়া কৃষ্ণ সাগরে দেশটির সবকটি বন্দরের দখল নিয়েছে। ফলে লাখ লাখ টন খাদ্যশস্য গুদামে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হলেও ইউক্রেন সেগুলো রপ্তানি করতে পারছে না। এদিকে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ। সংকটজনক এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য বের করে আনতে দিতে একটি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু রাশিয়া বলেছে, আগে তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তবেই ইউক্রেনের শস্য বের করতে দেয়া হবে। সেইসঙ্গে ইউক্রেনকে তাদের বন্দরগুলোর চারপাশের সমুদ্রের পানি মাইন মুক্ত করতে বলেছে। যাতে পণ্যবাহী জাহাজ নিরাপদে চলাচল করতে পারে।

ইউক্রেনের অভিযাগ, রাশিয়া তাদের শস্য চুরি করছে। এছাড়া, জলপথ মাইন মুক্ত করে দিলে সেই পথ দিয়ে রাশিয়ার সামরিক জাহাজ ইউক্রেনে চলে আসবে। ইউক্রেনের গ্রেইন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলা হয়েছে, শস্য রপ্তানি করতে না পারায় তাদের গুদামগুলো খালি হচ্ছে না। তারা জানান, ইউক্রেনের গুদামগুলোর সাড়ে পাঁচ কোটি টন শস্য মজুদ রাখার সক্ষমতা আছে। এরইমধ্যে গুদামে তিন কোটি টন শস্য মজুদ হয়ে আছে। কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো দিয়ে শস্য রপ্তানি করতে না পারলে ইউক্রেন বছরে মাত্র দুই কোটি টন শস্য বিদেশে পাঠাতে পারবে।

পশ্চিমা বিশ্বের অভিযাগ, ইউক্রেনের বন্দরগুলো দিয়ে শস্য রপ্তানি করতে না দিয়ে রাশিয়া বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাশিয়ার কারণেই বিশ্বজুড়ে চলমান খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। রাশিয়া ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বরং ইউক্রেনকে এজন্য দায়ী করছে। ইউক্রেন যদি শস্য রপ্তানি করতে না পারে তবে তাদের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি আরো কঠিন সংকটে পড়বে। তুরস্ক এ বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনের এবং ইউক্রেনে শস্য বের করে আনতে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছে।

ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে অনেক বন্ধু ও মিত্র হারিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু তুরস্ক এখনও রাশিয়ার পাশে আছে এবং নিয়মিত দেশটির সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছে। বুধবারও দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তারা কীভাবে ইউক্রেনের গম বের করে আনা যায় তার সম্ভাব্য উপায় খুঁজে পেতে আলোচনা করেছেন বলে জানায় বিবিসি। তুরস্ক তাদের তত্ত্বাবধানে বসফরাস প্রণালী দিয়ে ইউক্রেনে পড়ে থাকা খাদ্যশস্য বের করে আনার প্রস্তাব দিয়েছে এবং এটি নিয়ে মস্কো ও কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।

রাশিয়া ইউক্রেনকে তাদের কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরের জল মাইনমুক্ত করে দেয়ার যে শর্ত দিয়েছে তা মানতে নারাজ কিয়েভ। কিয়েভের আশঙ্কা, সেক্ষেত্রে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের গতি বাড়াতে ওই পথ ব্যবহার করতে পারে। তাই তারা এ বিষয়ে নিশ্চয়তা চাইছে যে, নিরাপদ ও মাইন মুক্ত জলপথ যেন শুধু পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে ব্যবহার হয়। রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ওই পথ ব্যবহার করতে পারবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইরানে ট্রেন লাইনচ্যুত নিহত ২১
পরবর্তী নিবন্ধকাট্টলীতে বাসচাপায় পত্রিকার হকার নিহত