অনলাইন জন্মনিবন্ধন : পদ্ধতি সহজ করতে নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে

| মঙ্গলবার , ২ নভেম্বর, ২০২১ at ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

তথ্য প্রযুক্তি এমন এক সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য শিক্ষা যন্ত্র, যা শিক্ষা ব্যবস্থায় কার্যকারিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। স্কুল ব্যবস্থায় শিক্ষা দানের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় কাজকর্ম দ্রুত ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের আধুনিক টেকনোলজিতে দক্ষ করার লক্ষে সারা বিশ্বে শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়োগ করা হয়েছে। বলা যেতে পারে, নতুন অধ্যায়ে পা রাখছে বিশ্ব। অনেকে এই দশককে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দশক বলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই বিপ্লবকে মোকাবিলায় এবং সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে চাইলে আমাদেরকে অবশ্যই ইন্টারনেট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমতা আনতে হবে। সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। গ্রামাঞ্চলে পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক স্টেশন স্থাপন করতে হবে। মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযুক্তিতে বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে হবে।
কিন্তু পরিতাপের বিষয়, যতই সুবিধা ও সহজ হোক না কেন প্রযুক্তি ব্যবহারে কিছু ক্ষেত্রে বিড়ম্বনাও বেড়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারই হচ্ছে না, কেবল অজ্ঞতার কারণে। দেশের অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের পর্যাপ্ততা ও সহজলভ্যতা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। বাংলাদেশ এদিক দিয়ে এখনো নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে ইন্টারনেট সার্ভিস এখনও সহজলভ্য নয়, বরং বহুল সমস্যা কবলিত। গ্রামে অধিকাংশ সময় সাধারণ মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকে না। মাঝে মাঝে টু-জি’র সিগনাল আসে। এতে করে কল দেওয়া বা রিসিভ করা গেলেও কথা ঘরের বাইরে গিয়ে বলতে হয়। কখনই থ্রি-জি ও ফোর-জি দেখা মেলে না। আর যখন নেট চালাতে হয় তখন বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের পথ হেঁটে নদীর ধারে ফাঁকা ও উঁচু একটি জায়গা আছে ওখানে গিয়ে নেট চালাতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাঁদের নিজেদের এবং তাঁদের সন্তানদের অনলাইনে জন্মনিবন্ধন করা নিয়ে। গত ৩১ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে ‘জনভোগান্তি এখনো কমেনি, অনলাইন জন্মনিবন্ধন প্রযুক্তির বিড়ম্বনাসহ নানা সমস্যা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে অভিভাবকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা ফুটে উঠেছে। বলা হয়েছে, অনলাইন জন্মনিবন্ধনে মানুষের দুর্ভোগ এখনো কমেনি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানাভাবে চেষ্টা করেও জন্মনিবন্ধন করাতে পারছেন না অনেক মানুষ। শহর ও গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ, সার্ভার ডাউনসহ প্রযুক্তির বিড়ম্বনায় দিনের পর দিন ধর্না দিয়েও মিলছে না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জন্মনিবন্ধন সনদপত্র। আবার সন্তানের জন্মনিবন্ধন করার আগে পিতা-মাতার অনলাইন জন্মনিবন্ধন তৈরি করেছে নতুন সংকট। একজন শিশু বা কিশোরের জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে তিনটি জন্মনিবন্ধন সনদপত্র তৈরি করতে হচ্ছে। একটি কম্পিউটার এবং একজন অপারেটরকে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চাপ সামলাতে হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন ছাড়া ন্যাশনাল আইডি কার্ড করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে টিকা প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে। অপরদিকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধনকালে সামান্য ভুল হলেও তা ঠিক করতে ছুটতে হচ্ছে জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সবকিছু মিলে জন্মনিবন্ধন নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ।
আমাদের দেশটি নামে ডিজিটাল হলেও এখনো কার্যত ডিজিটাল হতে পারে নি। জন্মনিবন্ধন ব্যাপারটি সহজ করার সুযোগ থাকলেও তা না করে জটিল করা হয়েছে। এত বেশি কাগজপত্র চাওয়া হয় যে, ওগুলো যোগাড় করতে গিয়ে পিতা-মাতার অনেক ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে।
দুর্ভোগ থেকে বাঁচার জন্য সহজ পন্থা বের করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, তাতে অনেকে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, জন্মনিবন্ধন সনদপত্র পাওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে উঠছে। অথচ এই সনদপত্র ছাড়া কোনো কাজই হচ্ছে না। নানাভাবে চেষ্টা করেও জনদুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিষয়টি সহজ করা জরুরি। কীভাবে মানুষের ভোগান্তি কমবে এবং কীভাবে আরো সহজতর করা যায় তা অবশ্যই নীতিনির্ধারকদের ভাবতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে