অনন্যা আবাসিকের দ্বিতীয় প্রকল্পে আবার সংশয়

সিডিএ’র শীর্ষ পর্যায়ে মতভেদ নতুন করে যাচাই-বাছাই করতে কমিটি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

অনন্যা আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় প্রকল্প কি আবার হিমাগারে চলে গেল? গত কয়েকদিন ধরে প্রশ্নটি জোরালো হয়ে উঠছে। প্রায় তের বছর পর আয়বর্ধক একটি প্রকল্প হিসেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অনন্যা আবাসিক এলাকার দ্বিতীয় প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলেও তা থমকে গেছে। একনেকসহ বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন এবং অর্থের সংস্থান করা হলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে কিনা তা যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) শীর্ষ পর্যায়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। একপক্ষ প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষে মতামত দিলেও অপরপক্ষ বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে শেষ পর্যন্ত প্লট বিক্রি হবে কিনা তা নিয়েই মুলতঃ সংশয় ব্যক্ত করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নগরবাসীর আবাসনের সংকট নিরসন এবং আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করেছে। সর্বশেষ ২০০৭ সালে অনন্যা আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়। এরপর গত ১৩ বছরে আর কোনো আবাসিক প্রকল্প সিডিএ গ্রহণ করেনি। ২০১৬ সালে ‘অনন্যা আবাসিক (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প’ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। নগরীর পাঁচলাইশ, কুয়াইশ ও বাথুয়া মৌজার ৪১৮ দশমিক ৭৩ একর জমিতে এ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল ওই সময়। কিন্তু প্লটের জায়গার মূল্য নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। পাঁচলাইশ ও কুয়াইশ মৌজার জমির যে মূল্য তার তিনগুণ দাম দিয়ে অধিগ্রহণ করে প্লট তৈরি এবং তা বরাদ্দ দিলে প্রতি কাঠার মূল্য ৩০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এত চড়া দামে কেউ প্লট নেবেন না। আবার ভুর্তকি দিয়ে প্লট বরাদ্দ দেয়াও সম্ভব না। ওই অবস্থায় অনন্যা আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি চাপা পড়ে যায়।
গত বছরের মাঝামাঝিতে মন্ত্রণালয় থেকে আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নিদের্শনা দেয়া হয়। ওই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সিডিএ পুনরায় অনন্যা আবাসিক এলাকার দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে মাঠে নামে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরবাসীর আবাসনে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নিজেদের আয় বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়।
কিন্তু আগেকার প্রকল্পে যথেষ্ট পরিবর্তন আনা হয়। ব্যয় কমানো এবং ভূমি মূল্য সহনীয় রাখতে নগরীর পাঁচলাইশ এবং কুয়াইশ মৌজার ভূমি বাদ দিয়ে হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া ও শিকারপুর মৌজার ভূমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে শুরুতে প্রকল্প এলাকা ৪১৮.৭৩ একর থাকলেও বর্তমানে তা কমে ২৭৬ একর নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৭৬ একর এলাকার ৪০ শতাংশ ভূমি রাস্তা, লেক, খেলার মাঠ এবং সবুজায়নসহ নানা ধরনের পারিপার্শ্বিক কাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। বাকি ৬০ শতাংশ ভূমির উপর বিভিন্ন সাইজের ২ হাজার আবাসিক প্লট এবং ২০টি বড় সাইজের কমার্শিয়াল প্লট করে নতুন করে প্রকল্প সারপত্র তৈরি করা হয়। নতুন প্রস্তাবনায় অনন্যা আবাসিক এলাকার দ্বিতীয় পর্যায়ে কৃত্রিম লেক, খেলার মাঠ, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পুলিশ বক্স, কনভেনশন সেন্টার, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সিডিএ’র দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এরমধ্যে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। এই ঋণের ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া থেকে শুরু করে আনুষাঙ্গিক বিষয় নিয়ে নতুন সংকট তৈরি হয়। ঋণ নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে ব্যাংকের টাকা শোধ করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন সিডিএ’র শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি অংশ। তাদের মতে, প্রকল্পটি হাটহাজারীর বেশ ভিতরে। এত ভিতরে গিয়ে প্লট তৈরি করলে তা বিক্রি হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সিডিএ’র শীর্ষ কর্মকর্তাদের অপর একটি অংশের মতে প্লটের জন্য বহু মানুষই আগ্রহী। হাজার হাজার মানুষ সিডিএ থেকে একটি প্লট নিতে চান। ভূমির মালিকানার জটিলতাসহ নানা ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে সিডিএর প্লট যে কারো কাছেই লোভনীয়। অনন্যা আবাসিক এলাকার দুই হাজার প্লট বিক্রি করা কোনো ব্যাপারই নয় বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, সিডিএ ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে। শত শত ফ্ল্যাট বেশ চড়াদামে বিক্রি হয়ে গেছে। ফ্ল্যাটের চেয়ে প্লট অনেক সহজেই বিক্রি করা সম্ভব হবে।
বিষয়টি নিয়ে সিডিএ’র শীর্ষ কর্মকর্তারা সংশয়ে পড়ায় প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকল্পটি হিমাগারে চলে গেছে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সিডিএ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি বিভিন্ন বিষয় যাচাই বাছাই করে প্রকল্পটির ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।
কমিটির একজন সদস্য দৈনিক আজাদীকে বলেন, সাত সদস্যের কমিটির প্রধান সচিব ইতোমধ্যে বদলি হয়ে গেছেন। নতুন সচিব দায়িত্ব নেয়ার পর পদাধিকারবলে তিনি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এখন পুরো বিষয়টি নিয়ে কবে কখন কী ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা অজানা বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় পরীক্ষা করে দেখছি। তবে প্রকল্পের ব্যাপারে অনিশ্চয়তার কিছু নেই। কিছুটা বাড়তি সময় লাগলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুলিশকে তিন বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধকার্টুন দেখানোর ছলে সাত বছরের খালাতো বোনকে ধর্ষণ