অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের চির প্রস্থান

| বুধবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পর্যন্ত বাংলাদেশের দীর্ঘ পথ পরিক্রমার অগ্নিসাক্ষী জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আর নেই। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় তার মৃত্যু হয় বলে তার ছেলে বর্ষণ ইসলাম জানান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন। স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিক্ষক, গবেষকের বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। পেটের ব্যথা নিয়ে গত ৭ অক্টোবর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হয়েছিলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে ভারতে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল বিকালে সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল সন্ধ্যায় তার মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরার বাসায়। সেখানে ১০ নম্বর সেক্টরের খালিদ বিন ওয়ালিদ মসজিদে এশার পর এক দফা জানাজা হয়। রাতে মরদেহ রাখা হবে হাসপাতালের হিমঘরে। সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ বুধবার দুপুরে তার কফিন নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। আসরের পর জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে কমিটির পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক ছিলেন। এই ভাষাবিজ্ঞানী ও লেখক ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন; সেই সময়ের দুর্লভ আলোকচিত্রও তিনি ধারণ করেছেন। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের এই প্রত্যক্ষ সাক্ষী সেইসব ইতিহাস গ্রন্থিত করেছেন তার লেখায়। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থটিসহ প্রায় ৩০টি বই তার হাত দিয়ে এসেছে।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের সাবেক উপাচার্য রফিকুল ইসলাম এক সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক করে নেয়। তিনি বেশ কয়েকটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালের ১৮ মে সরকার তাকে তিন বছরের জন্য বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব দেয়। মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদান রাখায় এই বছর তাকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ দেয় সরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বপ্নের সাঙ্গু সেতুতে যান চলাচল শুরু
পরবর্তী নিবন্ধব্যাডমিন্টন খেলার মাঠ থেকে মৃত্যুর কোলে