অটোমেশন সিস্টেমেই যত দুর্ভোগ

চট্টগ্রাম কাস্টমস

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা বাড়াতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সকল কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনার ওপর জোর দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরমধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমসে কয়েকটি সেবা অটোমেশনে আনাও হয়েছে। মূলত পেপারলেস ট্রেডিং সিস্টেমকে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে এ উদ্যোগ এনবিআরের। তবে এই অটোমেশনই বর্তমানে কাস্টমসের সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অটোমেশনে যে কাজ সেকেন্ডে হওয়ার কথা, সেটিতে লাগছে কয়েক ঘণ্টা। তাই কাস্টমসের অটোমেশন সিস্টেমের কার্যকারিতা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। অটোমেশনের মাধ্যমে কাস্টমসের নিয়মিত কার্যক্রমকে আরো বেগবান করার জন্য সিস্টেম সফটওয়্যারগুলো আরো স্বয়ংসম্পূর্ণ করার দাবি জানিয়েছেন সেবাগ্রহীতারা।
আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে ১৯৯৫ সালে অটোমেশনের যাত্রা শুরু হয়। শুল্কায়নের জন্য এক সময় অ্যাসাইকুডা প্লাস প্লাস ভার্সন থাকলেও গত ২০১৩ সাল থেকে কাস্টমসে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড ভার্সন চালু হয়। এই পদ্ধতিতে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রমের প্রায় সবকিছুই অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই সার্ভারের গতি কমে যাওয়া কিংবা বিকল হয়ে যাওয়ার ফলে আমদানিকারকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অপরদিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নির্দেশনা মোতাবেক বাণিজ্য সহজীকরণের অংশ হিসাবে এনবিআর গত ২০১৭ সাল থেকে ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালু করে। এ পদ্ধতিতে আমদানিকারক বা তার মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি ট্রেজারিতে শুল্ক-করের অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। তবে আগে পদ্ধতিটি বাধ্যতামূলক না থাকলেও গত ১ জুলাই থেকে ই- পেমেন্ট সিস্টেম বাধ্যতামূলক করা হয়। দুই লাখ টাকার বেশি শুল্ক-কর, ফি, চার্জ এই মাধ্যমে আদায় করতে দেশের সবগুলো কাস্টমস হাউসকে নির্দেশ দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টম হাউসগুলোও সেভাবে শুল্ক-কর আদায় শুরু করে। তবে বর্তমানে ই পেমেন্টে সেবাগ্রহীতাদের পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সকালে ই-পেমেন্টে শুল্ককর জমা করেও বিকেলেও সেটি জমা হচ্ছে না। অপরদিকে গত বছরের ২৭ অক্টোবর কাস্টমস হাউসে ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) চালু করে। কিন্তু সেই ই অকশনে কেবল অনলাইন দরপত্র জমা দেয়া ছাড়া বাকি সকল কাজ হচ্ছে ম্যানুয়ালেই।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, অটোমেশন মানে হলো পেপারলেস একটি ব্যবস্থা। যেখানে স্টেকহোল্ডাররা ঘরে বসে প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করে কাজ করতে পারার কথা। এখন সেই জায়গায় কাস্টমসের কর্মকর্তারা সবকিছু ফাইলে দেয়ার কথা বলেন। এতে যে উদ্দেশে অটোমেশন কার্যক্রম শুরু হয়, সেটি অন্ধকারেই রয়ে গেছে বলা যায়। আমরা অনেক আমদানি পণ্যের অনলাইনে বিএসটিআই’য়ের মান পরীক্ষার সনদ নিয়ে থাকি। অনলাইনে সনদ থাকার পরও কাস্টমস কর্তারা সেটি ফাইলে দেখতে চান। এছাড়া বিভিন্ন টেবিলে টেবিলে ফাইল নিয়ে ভোগান্তি তো আছেই। কাস্টমসে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের যে স্বপ্ন আমাদেরকে দেখানো হয়েছিল, সেটি ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমও পরিকল্পনা মতো ব্যবহার হচ্ছে না। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ই পেমেন্টেও ভোগান্তি বেড়েছে। সকালে ই-পেমেন্ট করা হলেও বিকেল পর্যন্ত সেটি পরিশোধ হয়েছে দেখাচ্ছে না। ব্যাংকের পে অর্ডারে শুল্ক পরিশোধ করলেও এতটা ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। প্রত্যেকটা দিন ই-পেমেন্টে ঝামেলা লেগে থাকছে। আমদানি-রপ্তানিকারকদের ইউজার আইডি দিয়ে ব্যাংক টু ব্যাংক আরটিজিএস (রিয়েলটাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) গেটওয়ের মাধ্যমে শুল্ক নেয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই শুল্ক পরিশোধ হওয়ার কথা। এছাড়া কাস্টমসের নিয়মিত শুল্কায়নের ক্ষেত্রেও মাঝে মাঝে সার্ভার বিভ্রাটের সম্মুখীন হতে হয়। কিছুদিন আগে বিকেল থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা শুল্কায়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
এদিকে ই-অকশন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিয়মিত বিডার (নিলামে অংশগ্রহণকারী) ‘আর রেজা’র স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জহিরুল ইসলাম নাঈম দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে ই অকশন চালু হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। এ পর্যন্ত দুটি ই-অকশন সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২০ লট পেঁয়াজ নিলামে তোলা হয়। ই-অকশনের সাথে ম্যানুয়াল পদ্ধতির অকশনের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে কেবল দরপত্র জমা দেয়াতেই। ই অকশনে দরপত্র জমা দেয়াটাই হচ্ছে অনলাইন। বাকি সব পদ্ধতি আগের মতো ম্যানুয়ালে হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো- ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দরপত্রের সাথে আমরা ব্যাংক পে-অর্ডার জমা করে দিতাম, যারা সর্বনিম্ন বিডার তাদের পে-অর্ডার ৪ থেকে ৬ কার্যদিবসের মধ্যে ফেরত পেতাম। কিন্তু ই-অকশনের ক্ষেত্রে নিয়ম করা হয়েছে, দরপত্র জমা দেয়ার দুই কার্যদিবসের মধ্যে পে-অর্ডার জমা দিতে হবে। এতে বিডারদের সময়ক্ষেপণ হবে এটি স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে ই-অকশনে যারা সর্বোচ্চ বিডার হবেন, তাদের কেউ যদি পে অর্ডার জমা না দেন, সেক্ষেত্রে পুরো নিলাম কার্যক্রমই বাধাগ্রস্ত হবে।
এবিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সিস্টেম এনালিস্ট আহসান হাবীব সুমন দৈনিক আজাদীকে বলেন, কাস্টমসে বর্তমানে সার্ভার আপগ্রেডশনের কাজ চলছে। অনেক কিছু নতুন আপলোড হচ্ছে। এতে বর্তমানে শুল্কায়ন কার্যক্রমে কিছুটা কারিগরি সমস্যা হতে পারে। তবে এসব সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী নয়। ই পেমেন্টে সার্ভার সংক্রান্ত বিষয় জড়িত। ই পেমেন্টের ক্ষেত্রে এনবিআরের সার্ভারের সাথে ব্যাংকের সার্ভার সংযুক্ত থাকছে। কেনো একটাতে ত্রুটি দেখা দিলে তখন সমস্যা দেখা দেয়। তবে আমাদের দিক থেকে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ফিঙড করে ফেলি। ই-অকশনের বিষয়ে কাস্টমসের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অবগত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে মৃত্যু ও রোগী দুটোই বেড়েছে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে টিকার অপেক্ষায় ১৬ লাখের বেশি নিবন্ধনধারী