অঞ্জন নন্দীর ছায়ামানবী

মহি মুহাম্মদ | শুক্রবার , ১৯ মার্চ, ২০২১ at ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ইতিহাসকে কেন্দ্র করে একরাতের কাহিনি ছায়ামানবী(২০২০)। ইতিহাসকে পটভূমি করে বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য আখ্যান রচিত হয়েছে। কথাকাররা ইতিহাসের ভেতর থেকে সাহিত্যের উপাদান ছাড়াও জীবনযাপনের নানা বর্ণিল ক্ষণ খুঁজে এনেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়(১৮৩৮-১৮৯৪) থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮৬১-১৯৪১) কিংবা হালের তরুণ লেখকটি পর্যন্ত ইতিহাস থেকে কাহিনি নিয়ে এসে পাঠককে চমকে দিতে চান। সেই ধারাতেই অঞ্জন নন্দী (১৯৬২) ঊনষাট বছরে এসে রচনা করলেন ছায়ামানবী(২০২০)। তরুণ বয়সে লেখালেখিতে তিনি নিয়মিত ছিলেন। পরে নানাকারণে লেখালেখি থেকে ছিটকে পড়েন। জীবনের চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আবারও তিনি লেখালেখিতে ফিরে এসেছেন। আর এই ফিরে আসার মধ্যে এক ধরনের দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ীভাব পরিলক্ষিত হয়। কাহিনির পরতে পরতে ঔপন্যাসিক হিসেবে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি পাঠকের দৃষ্টি এড়ায় না। একজন লেখকের সবচেয়ে বড় সম্পদ জীবন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও উপলব্ধি। অনেকেই বলে থাকেন লেখকরা সারাজীবন জীবনাভিজ্ঞতাই ভাঙিয়ে ভাঙিয়ে লিখতে থাকেন। সে দৃষ্টি যার যত গভীর সে তত কুশলী রূপকার।
বিদেশি বণিকরা ভারত উপমহাদেশে ব্যবসা করতে এসেছে। তাদের মধ্যে ইংরেজ, পর্তুগীজ, ফরাসি আরো অনেকে আছে। কিন্তু এই বণিকশ্রেণির জাতিরা ভারত উপমহাদেশে শুধু ব্যবসা বাণিজ্য করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা বাণিজ্য করার পাশাপাশি খুন-লুট-দস্যুতা-দাসব্যবসা ও নারী নির্যাতনের মতো কাজে লিপ্ত ছিল।
পর্তুগীজ নাবিকরা এদেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের আস্তানা গড়ে তোলে। ইতিহাসে তাদের নিষ্ঠুরতার কথা লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু তার মধ্যেও সে সব মানুষের যাপিত জীবন ছিল। যার স্বাক্ষর ইতিহাসে মেলে না। সেই জীবনটাকেই কথাসাহিত্যিক অঞ্জন নন্দী ধরার চেষ্টা করেছেন। সেই জীবনের চিত্ররেখা এতবছর পরে অনুসন্ধিৎসু পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তিনি রচনা করেছেন আলোচ্য উপন্যাসটি। কালের পরিক্রমায় ঔপন্যাসিকের বর্ণনায় উঠে এসেছে যেন ইতিহাসের অতলে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো। তাদের সুখ-দুঃখের কাহিনি, তাদের জীবনের উত্থান-পতন-রাজনীতি কিভাবে কাজ করেছে তার গুপ্ত কৌশল ঔপন্যাসিক আন্তরিকতার সঙ্গে তুলে এনেছেন।
দুই
একটি রাতের কাহিনি। পড়তে পড়তে মনে হয়েছে আরব্য রজনীর হাজার রাতের কাহিনির কথা। কিন্তু শুরু থেকে শেষে গিয়ে থমকে ভাবতে হয়েছে, এটা কি হলো? অর্থাৎ মাত্র একটি রাতেই কাহিনি শেষ হয়ে গেল। কিন্তু কাহিনির ভেতর তো হাজার হাজার রাত ধরা রয়েছে। আর ধরা রয়েছে উপন্যাসের পাত্র-পাত্রীদের যাপিতজীবন। তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-ভালোবাসার রং সূক্ষ্ম তুলিতে তুলে এনেছেন লেখক। যে জীবন পাঠকরা কল্পনা করতে পারেন। কিংবা চোখ বুজলেই ভাবতে পারেন। গ্রন্থণা করতে গিয়ে লেখক একটি রাতের ভেতর আরো অনেক রাত বিনিসুতার মালার মতো গেঁথে দিয়েছেন। তার মানে উপন্যাসটি রচনা করতে গিয়ে লেখককে কম খাটনি করতে হয়নি। আবার কাহিনির সামঞ্জস্য রাখতে তাকে কম রেখাচিত্র আঁকতে হয়নি! একটি উপন্যাস যখন লেখা হবে তখন ঔপন্যাসিক অবশ্যই নানারকম পরিকল্পনা হাতে নিয়ে থাকেন। সচেতন ঔপন্যাসিক এই কাজটি সচেতন ভাবেই করে থাকেন। কেউ প্রকাশ করেন আবার কেউ তা প্রকাশ করেন না। কিংবা কেউ উপন্যাস রচনা করতে গিয়ে কোনো আগুপিছু ভাবেন না, একটানেই লিখে গেছেন বলে বাহবা কুড়াতে পছন্দ করেন। হতে পারে সব রকমই। কিন্তু লেখকের মনে মনে একটা প্রস্তুতি থাকেই। অঞ্জন নন্দীর উপন্যাসটি পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে, লেখক দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নিয়েছেন। তারপর এই সময়ে এসে লিখতে শুরু করেছেন। তার কর্মজীবনের দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকে এই লেখারও প্রস্তুতি চলছিল।
তিন
উপন্যাসটি শুরু হয়েছে আত্মকথনের মাধ্যমে। আধুনিক উপন্যাসের এও এক কৌশল। সাদামাটা শুরু। ব্যক্তির যাপিতজীবন থেকে পাঠকদের সঙ্গে নিয়ে অতীত স্মৃতির দেশে আত্মগোপন করা। আমার তাই মনে হয়েছে। লেখক বর্ণনা দিচ্ছেন, বক্তা নিজেই বের হয়ে পড়েছেন তার কর্মস্থল অফিস থেকে। তখন সময় শেষ বিকেল। ইতিহাসের ভেতরে ঢোকার আগে লেখক যে অবস্থানের বর্ণনা আমাদের দেন তা আমাদের পরিচিত। একটি পরিচিত ভৌগোলিক অঞ্চলের বিবরণ দিয়ে চেনাজানা পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা নতুন কিছু নয়! এ আর এমন কি ভাব নিয়ে পাঠক তার সঙ্গে এগিয়ে যেতেই পারেন। কিন্তু ওস্তাদের মার নাকি শেষরাতে। লেখক পাঠকদের বন্দি করেন তার মায়া ছড়ানো লেখায়।

‘ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসছে। অন্ধকার আলিঙ্গন করছে বিশাল বিশাল সেগুনগাছগুলোকে। তাদের আড়ালে আকাশ প্রায় অদৃশ্য। একটু সামনে এসে দ্বিধায় পড়ি। ডানপথে গেলে বাণিজ্য অনুষদ। এরপর আমার বাংলো। আর বামপাশে সামনের সিঁড়িতে উঠলে চারশ বছরের বেশি পুরানো পর্তুগিজ ভবন। মহাকালের বিবর্তনে আজ তা মহসিন কলেজের অংশ। আমি ডানকে নয়, বামকেই বেছে নেই। আস্তরখসা লাল ইট বের হওয়া ভগ্নপ্রায় সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকি। আজ যেন নিজের ওপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আস্তে আস্তে লতাপাতায় মোড়া জীর্ণ ভবনের সামনে এসে দাঁড়াই।’
এই যে এসে দাঁড়ানো এই দাঁড়ানোর মধ্যেই সন্ধ্যা নামে। আযান পড়ে। কৌতূহল নিয়ে উপন্যাসের চরিত্রটি দাঁড়িয়ে থাকে। তার অনুভবে প্রশ্ন জাগে – ‘এই আমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি! স্মৃতির শ্যাওলাজমা এক প্রাচীন উপনিবেশের সামনে! যার সাথে মিশে আছে নিষ্ঠুর শাসন, শোষণ, বাণিজ্য, লুট, ধ্বংস, প্রেম আর নির্যাতনের বিচিত্র কাহিনি। হয়তো আরো কিছু….! আমার দিব্যকর্ণে কোনো অশরীরী আত্মার বিচরণের শব্দ ভেসে এল।’
তারপর একটি বাক্য। এই বাক্যটি যেন পাঠককে নিয়ে লেখক এক অচেনা মানবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
‘ভিতরে কেউ কি আছেন?’
এরপর চলতে থাকল আলো-আঁধারির খেলা। ছায়া মানবীরূপী ইভা গলজালভেস পাঠকের সঙ্গে তথা আগন্তুকের সঙ্গেও পরিচিত হলো। লেখক এবার পাঠককে ছেড়ে দিলেন। পাঠক এবার নিজেই যেন আগন্তুকের সঙ্গে সঙ্গে এই কাহিনি জানার জন্য আকুল হয়ে উঠল।
‘রিমঝিম নূপুরের শব্দে পেছন ফিরি। অবাক বিস্ময়ে দেখি এক রাশ ভেজা চুল নিয়ে আমার পেছনে দাঁড়িয়ে এক নারী। তার মায়াবী চোখে বিষাদময় দৃষ্টি। চুল থেকে গড়িয়ে পড়ছে মুক্তোর মতো জল, শরীরে আতরের মিষ্টি সুবাস আর পরনে মিহি মসলিনের শাড়ি। যেন সব হারানো এক বিষণ্ন-প্রতিমা। আমার বিস্ময়ের ঘোর কাটে, তার সুরেলা কন্ঠে। স্খলিত স্বরে তিনি বলেন, এতো দিন পরে এলেন ?’
এমন মন্ত্র মুগ্ধের মতো বর্ণনা দিয়ে লেখক টেনে নেন পাঠককে। পরিচয় করিয়ে দেন এক ছায়ামানবীর সঙ্গে। আর সেই অতৃপ্ত ছায়ামানবী তার জীবনের না বলা কাহিনি বক্তার সঙ্গে বলতে থাকেন। আমরা যারা পাঠক, তারাও কান পেতে রাখি। দৃষ্টি প্রসারিত করি। হারিয়ে যাই যেন শত শত বছর পেছনে। বলা যায়, টাইম মেশিনে চড়িয়ে লেখক আমাদের অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যান। যে সময় এই পর্তুগিজ ভবন ছিল পর্তুগিজদের। তাদের শাসন ছিল, হাতিশালে হাতি ছিল, ঘোড়াশালে ঘোড়া। আরো কতো কি!
ইভার বাবার নাম স্টিভ। স্টিভ গনজালভেস। পর্তুগিজ সেনাধ্যক্ষ। সে খাজনা আদায় করে ব্যবসা দেখাশোনা করে। আবার দস্যুবৃত্তিও করে। তার কাছে দয়ামায়ার স্থান নেই। দুর্গ থেকে কর্ণফুলী নদী দিয়ে গভীর সাগর পর্যন্ত যাতায়াত তার। ইভার মা স্বর্ণময়ীকে স্টিভ তুলে এনেছিল বিয়ের আসর থেকে। তারপর স্বর্ণময়ীকে বিয়ে করেছিল। স্বর্ণময়ীর সন্তান ইভা। পর্তুগিজ ভবন থেকে কর্ণফুলীর সঙ্গে একটা গুপ্ত পথ ছিল। দূরবিনে দেখে তারা স্বল্প সময়ে যে কারো নৌকায় লুণ্ঠন চালাতে পারতো।
উপন্যাসে কথকের সঙ্গে ইভার যে সংলাপ তার মধ্যে দিয়েই ইভা পাঠককে নিয়ে ইতিহাসের পাতায় সেই সব দিনে ফিরে যায়। ইভা কথককে চট্টগ্রামের ইতিহাস জিজ্ঞেস করে। কথক বিজ্ঞানের ছাত্র বলে তেমন সাড়া না মিললেও ইভা নিজেই চট্টগ্রামের ইতিহাস বলতে থাকে।
‘শোনো, চট্টগ্রামের ইতিহাস কিন্তু কলকাতার চেয়েও প্রাচীন। দশম শতকে গোপিচন্দ্র নামে এক বৌদ্ধ রাজার রাজধানী ছিল চট্টগ্রাম। ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলায় দুটো সমৃদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। একটা পূর্বদিকে চট্টগ্রাম আর পশ্চিমে সরস্বতী নদীর তীরে সপ্তগ্রাম। পর্তুগিজরা প্রথমে দখল করে চট্টগ্রাম তারপর সপ্তগ্রাম। চট্টগ্রামকে তারা ডাকত সাটিগান, যা ছিল তাদের কাছে পোর্ট গ্রান্ডি বা বড় স্বর্গ আর সপ্তগ্রাম ছিল পোর্ট পিকানো বা ছোট স্বর্গ। ধীরে ধীরে স্থানীয়দের সঙ্গে তারা বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে থাকে। এর অন্যতম কারণ ছিল স্থানীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে বাণিজ্য সহজ করা। ১৫২৮ সালে বাংলার সুলতান পর্তুগিজ বণিকদের চট্টগ্রামে স্থায়ী বাণিজ্য কুঠি ও কারখানা খোলার অনুমতি দেন। সার্বিক বিষয় দেখভাল করার জন্য নুনো ফারনানডেজ ফ্রিয়ারকে নিয়োগ করা হয়। এসময় পর্তুগিজরা আনোয়ারার দেয়াঙ এলাকায় বিশাল নৌঘাঁটি, সামরিক-স্থাপনা আর শুল্ক কুঠি গড়ে তোলে। তুমি কি দেয়াঙ গিয়েছো ?’
ইভা, পতুর্গিজ সেনাপতি স্টিভের কন্যা। পরে ইভার সঙ্গে সন্দ্বীপের প্রতিনিধি রবিন ডি কস্তার সম্পর্ক হয়। রবিনের মনোজগত লেখক দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার মা হংসিকা। রবিনের জন্ম ইতিহাস সব মিলয়ে রবিনের মনস্তত্ত্ব পাঠকের মনে দাগ কেটে থাকবে। কাহিনির নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে রবিনের সঙ্গে ইভার বিয়ে হলেও সে বিয়ের আসর থেকে রবিনকে মোগলদের মোকাবেলা করতে উঠে যেতে হয়। আর পর্তুগিজ ভবনে মোগলদের হামলার খবর পেয়ে ইভা গোপন কুঠুরিতে আশ্রয় নেয়। লেখক সে মর্মস্পর্শী ঘটনার বর্ণনা দেন নিন্মোক্তভাবে-
‘বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ঘুলঘুলির ঝালর দিয়ে মৃদু আলো এসে পড়ছে দেয়ালে। কেউ উদ্ধার না করলে মৃত্যু নিশ্চিত। যেটুকু খাবার আর জল এখানে আছে, তা অতি সামান্য। পৃথিবীর কেউ জানবে না একজন মানবীর গোপন মৃত্যুর কথা। পর্তুগিজ সভ্যতার ইতিহাস জানবে না, তাদের দস্যুতা আর ঔদ্ধত্যের ফলশ্রুতিতে কতো নিরীহ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। ইতিহাস সবসময় বীরদের কথা বলে, তাদের বীরত্বের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় সেইসব সহযোগীদের কথা যাদের রক্তের উপর অঙ্কিত হয় সভ্যতার মানচিত্র।
ইভা মেঝে থেকে ছোট ইটের একটা টুকরো তুলে দেয়ালে লেখে , ২৬ জানুয়ারি ১৬৬৬, মঙ্গলবার। বিদায় সাটিগান।’
ইভার করুণ মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে যায় উপন্যসের কাহিনি। একুশ নং পরিচ্ছেদে কথক আবার ফিরে আসেন ইভার মুখোমুখি। ইভা যেন এখনও প্রতীক্ষায় আছে কোনো একদিন রবিন এসে এই সভ্যতার নগর থেকে নিয়ে যাবে তাকে বহুদূরে। কথকের সঙ্গে এইরকম কথাবার্তার মধ্যে দিয়েই রাত ভোর হয়ে যায়। কথক বাস্তবে ফিরে আসেন। রবিন না হতে পেরে মনের কোণে কষ্ট অনুভব করেন। রবিন হতে পারলে হয়তো ইভাকে তিনি মুক্তি দিতেন।
পাঁচ
ঔপন্যাসিক পুরো ইতিহাসকে একটি ছোট্ট সময়কালে বেঁধে রেখেছেন। পুরো উপন্যাসের ব্যাপ্তিকাল শেষ বিকেল থেকে শুরু করে পরেরদিন ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত যেন একটা পরিভ্রমণ। এ পর্যন্ত লেখকের কল্পিত উপস্থিতি এক নারীর কথোপকথনের মাধ্যমে কাহিনি এগিয়ে চলেছে। সে কাহিনির মধ্যে দিনরাত সব একাকার হয়ে গেছে। সেখানে জীবন উত্তাল ঝরের মতোন।
ছায়ামানবী লেখকের প্রথম উপন্যাস। মুদ্রিত অক্ষরের প্রথমগ্রন্থ হলেও আখ্যানভাগ রচনায় তিনি সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। মনে হয়েছে, তিনি কোনো তাড়াহুড়ো না করে কাহিনির নীলনকশা অংকন করে-তা কল্পিত চরিত্রসমূহের সঙ্গে কালের বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন। ইতিহাসের সঙ্গে জোড় বেঁধে তার কাহিনি সমান্তরাল করে তিনি এগিয়ে গেছেন। এ কঠিন কাজটি তিনি সহজ সুন্দরভাবে করতে পেরেছেন- তা উপন্যাস পাঠে অনুমেয়। ছোটখাট যে ত্রুটি-বিচ্যূতি রয়েছে তা বাদ দিলে উপন্যাসটি গুরুত্ব কম নয়! সব শ্রেণির পাঠকের চিত্ত জয় করা কঠিন কাজ। কিন্তু মনে হচ্ছে ছায়ামানবী পাঠ করে-সব শ্রেণির পাঠক আনন্দ লাভ করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৃষ্ণকায় রাত
পরবর্তী নিবন্ধ‘বিতর্ককে শিল্পের পথে নিয়ে যেতে পিইউডিএস কাজ করছে’