অগোচরে থাকা মুরাদ ‘আল্লাহর ওয়াস্তে’ মাফ চাইছেন

ঢাবি ছাত্রের অভিযোগের তদন্ত শুরু

| বৃহস্পতিবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

অডিও কেলেঙ্কারির পর প্রতিমন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানো মুরাদ হাসান নিজেকে আড়ালে রাখলেও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পরম শ্রদ্ধেয় মমতাময়ী মা, বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা, আমি যে ভুল করেছি তা আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে মাফ করে দিবেন। আপনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা আমি সবসময়ই মাথা পেতে নিবো আমার বাবার মতো।’ এদিকে অডিও কেলেঙ্কারিতে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ কর্মীর করা অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার হারুন অর রশিদ গতকাল বুধবার এ তথ্য জানান। খবর বিডিনিউজের।
গত সোমবার ওবায়দুল কাদের যখন বলেছিলেন যে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তারপর থেকে অগোচরে রয়েছেন তিনি। তবে মঙ্গলবার তিনি প্রথমে ইমেইলে পদত্যাগপত্র জমা দেন মন্ত্রণালয়ে। পরে পদত্যাগপত্রের হার্ড কপিও পাঠান। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তার বিদায়ের প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এর মধ্যে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগও মুরাদকে জেলা কমিটিতে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। এসবের মধ্যে মুরাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে ক্ষমা চেয়ে তিনি লিখেছিলেন, আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে বর্ণ ও নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে সমালোচনায় পড়েন মুরাদ হাসান। এরপর চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার অশালীন আচরণের একটি অডিও অডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে মুরাদের অশালীন বক্তব্যের অডিওও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে মুরাদের বিদায় ঘণ্টা বেজে যায়। গতকাল বুধবার জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য মুরাদকে।
দেশজুড়ে মুরাদকে নিয়ে আলোচনা চললেও তার অবস্থান এখন কোথায়, তা তার সংশ্লিষ্ট কেউই বলতে পারছেন না। বাদ পড়ার পর মন্ত্রণালয় ও জেলা নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ নেই তার। মঙ্গলবার মুরাদ পদত্যাগপত্র পাঠালে তার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে। তবে তারা কিছু বলতে পারেননি। বুধবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের (প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর) একজন কর্মকর্তা জানান, পদত্যাগের পর মুরাদ হাসান কোথায় আছেন, কীভাবে রয়েছেন সে খবর নেই তাদের কাছে। কোথায় যোগাযোগ বা কথাবার্তা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটাও জানি না। ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্টদের নম্বরও বন্ধ। আমিও চেষ্টা করেছিলাম; সব বন্ধ এখন।
অভিযোগের তদন্ত শুরু : প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী জুলিয়াস সিজার তালুকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক জিএস। ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবেই তিনি নির্বাচনে জিতে জিএস হয়েছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় গিয়ে তিনি ওই মামলার আবেদন করেন। তার অভিযোগ, মুরাদ হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তাচ্ছিল্য এবং রোকেয়া ও শামসুন নাহার হলের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর শিক্ষার্থীদের মানহানি হয়েছে।
উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, অভিযোগটি গ্রহণ করে প্রাথমিকভাবে জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগটি পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন আসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাইবার অপরাধ বিভাগ যদি মামলা করার মত কোনো বিষয় পায় এবং পরামর্শ দেয়, সেক্ষেত্রে শাহবাগ থানায় নিয়মিত মামলা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
জুলিয়াস সিজার থানায় দেওয়া তার লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘নাহিদরেইনস পিকচার্স’ নামের একটি ফেসবুক পেজে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের একটি বিকৃত ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ তিনি দেখেছেন। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে সে দেশের সর্ব প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাচ্ছিল্য করেছে।
ওই ভিডিওতে রোকেয়া হল ও শামসুন নাহার হলের নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন জুলিয়াস সিজার। তিনি বলেছেন, আমরা মনে করি, যেকোনো বিদ্যাপীঠই পবিত্র স্থান এবং একজন নাগরিকের চারিত্রিক বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে একটি সীমারেখা রক্ষা করা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। উক্ত দুটো মন্তব্যের মাধ্যমে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং বিদ্যাপীঠসমূহের প্রতি তীব্র অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে মধ্যযুগীয় কায়দায় ঘৃণার রাজনীতি করার অপপ্রয়াস দেখিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখাল পাড়ে অপেক্ষায় দুই স্বজন
পরবর্তী নিবন্ধনাজিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ