অক্ষয়কুমার বড়াল : কল্পনা আর বিজ্ঞানচেতনার কবি

| রবিবার , ১৯ জুন, ২০২২ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

অক্ষয়কুমার বড়াল। রবীন্দ্র সমকালীন কবিদের মধ্যে যাঁরা নিজস্ব ধারায় বিশিষ্টতা অর্জন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম প্রধান কবি। কল্পনাপ্রবণ ও সৌন্দর্যপিয়াসী কবির রচনায় ব্যক্তিগত জীবনবোধ আর প্রেম যেমনভাবে এসেছে, পাশাপাশি প্রকাশ পেয়েছে বেদনাভারে আচ্ছন্নতাও। কলকাতার চোরাবাগানে ১৮৬০ সালে অক্ষয়কুমার বড়ালের জন্ম। শৈশবে হেয়ার স্কুলের ছাত্র ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে এটুকুই। হেয়ার স্কুলের পাঠ সম্পূর্ণ হবার আগেই তিনি স্কুল ছাড়েন।

হেয়ার স্কুলের ছাত্রাবস্থাতেই অক্ষয়কুমার বাংলা গীতিকবিতার প্রবর্তক বিহারীলাল চক্রবর্তীর কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাঁর কাব্যপ্রেরণাতেই তিনি কবিতা রচনায় মনোনিবেশ করেন। রবীন্দ্রনাথের মতো অক্ষয়কুমার বড়ালকেও বলা হয় ‘বিহারীলালের সাক্ষাৎ ভাবশিষ্য’। বাংলা গীতিকবিতার ইতিহাসে তিনি ‘বড়াল কবি’ নামে সুপরিচিত। নিসর্গ, প্রেম, শোক এবং মানববন্দনাবিষয়ক কবিতা রচনায় অক্ষয়কুমার স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় দিয়েছেন।

তাঁর চিন্তাধারা ছিল মার্জিত ও বিজ্ঞানমনস্ক। অক্ষয়কুমার বড়ালের বিজ্ঞানচেতনা স্বকপোল কল্পিত ছিল না, ছিল প্রাচীনকালের বিজ্ঞান ভাবনা ও তাঁর জন্মের আগে বিভিন্ন পাঠশালা, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ এবং রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচেতনার পরম্পরা। আমাদের অন্বিষ্ট কবি অক্ষয়কুমার বড়ালের কবিতায় বিভিন্ন মনীষী প্রেম, প্রকৃতি, নারী বিষয়ে কমবেশি আলোকপাত করলেও কবিতার ভেতরমহলে যে বিজ্ঞানভাবনা, বিশেষ করে অণু-পরমাণু প্রসঙ্গ, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান বিভিন্নভাবে প্রযুক্ত হয়েছে, এবং এ-ভাবনার বৈগুণ্যে তিনি একজন বিজ্ঞানচেতনাসম্পন্ন কবি হিসেবে গণ্য। তিনি লিখেছেন কম।

তার শব্দ চয়ন ও বিষয়-ভাবনায় বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থে বিজ্ঞানের প্রয়োগ সম্পর্কে যে-স্বমেধার পরিচয় দিয়েছেন, তা একটি সুন্দরতম সংযোজন। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘প্রদীপ’, ‘কনকাঞ্জলি’, ‘ভুল’, ‘শঙ্খ’ ইত্যাদি। প্রেম, সৌন্দর্যমুগ্ধতা, কল্পনাবিলাসিতা আর বেদনার ছায়াপাত অক্ষয়কুমারের রচনারীতির বৈশিষ্ট্য। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি কাজ করেছেন ব্যাংক ও জীবনবীমা কোম্পানিতে। ১৯১৯ সালের ১৯ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আজও ভারী বৃষ্টির আভাস