বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ির ফল এখন মিলছে, নতুন এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমে এসেছে, তবে নিষ্পত্তির চিত্র আগের মতই রয়েছে। ডলারের সরবরাহ সঙ্কটে এপ্রিলে বিদেশ থেকে পণ্য আনার গতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। ছয় মাস পেরিয়ে এখন সেসব কার্যক্রমের প্রভাবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে এবং একক মাস হিসেবে অক্টোবরে পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে। খবর বিডিনিউজের।
তবে পুরনো এলসির দায় মেটাতে গিয়ে নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এতে আমদানি বাণিজ্যে ডলারের খরচ কমেনি বরং আরও বেড়েছে। যে কারণের বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ডলারের উপর চাপ বজায় রয়েছে। অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নতুন এলসি কমে আসায় আগামী ডিসেম্বর নাগাদ হয়ত নিষ্পত্তির দায়ও পাঁচ বিলিয়নের ঘরে নেমে আসবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, আগামী জানুয়ারি নাগাদ এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হারও কাছাকাছি পর্যায়ে চলে আসবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে নতুন এলসি খোলা হয়েছে ২৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ কম (টাকার অঙ্কে ৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার)।
গত অর্থবছরের একই সময়ে ২৮ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। একক মাস হিসেবে অক্টোবরেও আগের তিন মাসের চেয়ে এলসি খোলার পরিমাণ কমে ৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আগের অর্থবছরের অক্টোবরের চেয়ে কমেছে ৩৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ওই মাসে এলসি খোলা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের।
এদিকে গত ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত খোলা হয়েছে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। এ ধারা বজায় থাকলে চলতি মাসেও এলসি খোলা কমার ধারা বজায় থাকবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। অপরদিকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের আলোচিত সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার বা ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার।
এলসি নিষ্পত্তির অর্থ হল- এ পরিমাণ অর্থের বিপরীতে পণ্য বন্দর থেকে খালাস হয়েছে। এদিকে এলসি কমলেও আগের দায় পরিশোধ করার পরিমাণ না কমায় ডলার সংকট কাটছে না ব্যাংকগুলোতে। চাহিদার বিপরীতে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২২ নভেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সহায়তা দিতে ৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে।
করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে বাড়তে থাকে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা এবং নিষ্পত্তির পরিমাণ। এ ধারা অব্যাহত থাকে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও। পরে ডলার সাশ্রয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্ক পদক্ষেপ ও নজরদারি বাড়ানোর প্রভাব নতুন এলসির খোলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানিতে যে উল্লম্ফন্ন ছিল তাতে লাগাম পড়েছে, আমদানির উচ্চ গতি ধীর হয়েছে।