৯ ব্যাংকের পে-অর্ডার নেবে না বন্দর কর্তৃপক্ষ

এর মধ্যে সাতটি এস আলম সংশ্লিষ্ট । সমস্যায় এসব ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করা ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা

হাসান আকবর | রবিবার , ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ

শিপিং এজেন্সির পেঅর্ডার না নেওয়ার রেশ কাটার আগেই এবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন সাতটিসহ মোট ৯টি ব্যাংকের পেঅর্ডার না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালনা করা হাজার হাজার ব্যবসায়ী শিল্পপতি বেকায়দায় পড়লেন; যা দেশের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানসহ বিরাজমান পরিস্থিতিতে ব্যাহত হয় দেশের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্য। চট্টগ্রাম বন্দর এবং সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটে। এর জের এখনো চলছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেনার এবং জাহাজজট পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংকট সৃষ্টি করেছে এস আলম গ্রুপের মালিকানা রয়েছে এমন সাতটিসহ নয়টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের পেঅর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেয় শিপিং এজেন্সিগুলো। এতে করে কন্টেনার জাহাজিকরণ এবং ডেলিভারি নেওয়ার আগে আমদানি এবং রপ্তানিকারকদের শিপিং এজেন্সিগুলোর পাওনা পরিশোধ করা নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়। জাহাজ ও কন্টেনার ভাড়া, ডেমারেজসহ নানা পাওনা পরিশোধ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর পেঅর্ডার না নেওয়ার ফলে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের অনেকেই দিশেহারা। এসব ব্যাংকের সাথে ব্যাংকিং করে আসছিলেন দেশের হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। অনেকের অন্য কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট নেই। আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী দুইতিনটি ব্যাংকে লেনদেন করলেও দেখা যাচ্ছে সবগুলো ব্যাংকই ওই নয়টি ব্যাংকের তালিকায় পড়েছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা চোখেমুখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেন।

এই পরিস্থিতিতে এবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এস আলম গ্রুপের মালিকানা রয়েছে এমন সাতটিসহ ওই নয়টি ব্যাংকের পেঅর্ডার গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সেবা নিতে কোনো প্রতিষ্ঠান এসব ব্যাংকের চেক বা পেঅর্ডার প্রদান করলে সেগুলো গ্রহণ না করতে বন্দরের সবগুলো বিভাগকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে ৯টি ব্যাংকের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের লেনদেন স্বাভাবিক নিয়মে চলছে না। এসব ব্যাংক থেকে পূর্বের মেয়াদি আমানতসহ বিভিন্ন আমানত উত্তোলন করতে পারছে না বন্দর। ফলে এসব ব্যাংকে নতুন করে সব ধরনের লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যাংকগুলো হচ্ছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, পদ্মা ব্যাংক পিএলসি, ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি। এসব ব্যাংকের মধ্যে ৭টিতে এস আলম গ্রুপের মালিকানা ছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে কয়েকটি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছে।

বন্দর সূত্র জানায়, উক্ত ৯টি ব্যাংকের গ্রাহকরা বেশ কিছুদিন ধরে অনলাইনে শুল্ককর পরিশোধ করতে পারছিলেন না। ব্যাংকগুলোর পেঅর্ডারও ফিরিয়ে দেয় শিপিং এসেন্সিগুলো। ফলে আমদানিরপ্তানিকারকেরা সংকটে পড়েন।

একাধিক আমদানিকারক বলেন, আমরা এসব ব্যাংক থেকে পেঅর্ডার দিলে তা বন্দর এবং শিপিং এজেন্সি গ্রহণ করছে না। এতে করে পণ্যের শুল্কায়নসহ যাবতীয় কার্যক্রম সমাধা করে চালান খালাস করতে পারছি না। আমাদের অনেক পণ্য বন্দরের অভ্যন্তরে আটকা পড়ে আছে। এসব পণ্যের জন্য লাখ লাখ টাকা ডেমারেজ গুণতে হবে। তারা বলেন, ব্যাংকগুলো থেকে পর্যাপ্ত নগদ টাকা তোলাও সম্ভব হচ্ছে না। আবার এসব ব্যাংক থেকে নিজেদের অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা অন্য ব্যাংকে সরিয়ে নিতেও পারছি না। ব্যাংকে টাকা আছে, অথচ আমরা কাজ করতে পারছি না; কী এক বিপদে পড়লাম।

এস আলম গ্রুপের মালিকানায় থাকা ৭টিসহ ৯টি ব্যাংকের বেহাল দশায় চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ও কন্টেনারজট হচ্ছে। পেঅর্ডার গ্রহণ না করায় চালান খালাস করা সম্ভব না হওয়ায় বন্দরে বিরাজিত কন্টেনারজট প্রকট হয়ে উঠছে। শিপিং এজেন্সিগুলো পেঅর্ডার নিচ্ছিল না কয়েকদিন ধরে। এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ অফিস অর্ডার জারি করায় আমদানিরপ্তানি কার্যক্রমে সংকট তৈরি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

একাধিক আমদানিকারক গতকাল আজাদীকে জানান, আমরা পেঅর্ডার এবং রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে অনলাইনে নিজস্ব ব্যাংক হিসাব থেকে শুল্ক কর পরিশোধ করে থাকি। এই প্রক্রিয়ায় শিপিং বিল, পোর্ট ডেমারেজসহ বিভিন্ন চার্জ ও ট্যারিফ পরিশোধ করা হয়। কিন্তু বেহাল অবস্থায় থাকা এস আলমের সাতটিসহ মোট ৯টি ব্যাংকের গ্রাহকরা অনলাইনে শুল্ক কর পরিশোধ করতে পারছেন না। এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে আরটিজিএস করাও সম্ভব হচ্ছে না।

বিদ্যমান পরিস্থিতি সুরাহা করতে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে সংকট প্রকট হবে বলে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা মন্তব্য করেছেন।

গত ১৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কার্যক্রম সীমিত এবং এসব ব্যাংক থেকে ঋণপত্র (এলসি) খোলা নিষিদ্ধ করে। এর আগে ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএস আলমের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের অনুসন্ধানে সিআইডি
পরবর্তী নিবন্ধদেশে ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৪৬