রেল ভবনে টানা ৫ ঘণ্টার বৈঠক শেষে সমঝোতা ও চুক্তির পর চলমান আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছেন রেলওয়ে রানিং স্টাফ (লোকোমাস্টার, গার্ড, টিটিই) কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতারা। গতকাল রোববার বিকালে রেল ভবনে রেল সচিবের সভাপতিত্বে রানিং স্টাফদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের ‘খ’ ও ‘গ’ ধারা বাতিল করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে চালকদের আগের মতোই মাইলেজ ভাতা এবং পেনশনে সুবিধা পুনর্বহালের আশ্বাস দেওয়া হয়। তাই আজ সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।
গতকাল বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয়ে এই বৈঠক চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। গতকাল রাত ৮টার দিকে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রেলের রানিং স্টাফদের সাথে বৈঠকে তারা আন্দোলন স্থগিত করেছেন। ওদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষ যা যা করা দরকার সবই করবে। শিগগির তাদের দাবি পূরণের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন তারা।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান আজাদীকে বলেন, রেল সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আমাদের সাথে মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে রানিং স্টাফদের মাইলেজ আগের মতোই বহাল থাকবে এবং পেনশনে আগের মতো মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল করবে বলে আশ্বস্ত করার পর আমরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি স্থগিত করেছি। এই ব্যাপারে আমাদের সাথে একটি লিখিত চুক্তি হয়েছে। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের ‘খ’ ধারা বাতিল করে আগের নিয়মে ট্রেনের চালকসহ রানিং স্টাফরা মাইলেজ ভাতা পাবেন এবং দ্রুত সময়ে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের ‘গ’ ধারা বাতিল করে গত বছরের আগে যেসব রানিং স্টাফ অবসরে গেছেন তাদের আগের নিয়ম অনুযায়ী পেনশন (মাইলেজ ভাতাসহ) আগামীকাল থেকে নিষ্পত্তি করবে বলে নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে রেলওয়ের ডিজি ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম চৌধুরী, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অর্থ) জাহিদুল ইসলাম, পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন ও প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২৫ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চালক ও গার্ডরা অতিরিক্ত ডিউটি (৮ ঘণ্টার বেশি) বর্জন করেছেন। এর ফলে চালক সংকটের কারণে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। একে একে বন্ধ হয়ে পড়ছে অনেক ট্রেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রুটের তিন জোড়া শাটল ট্রেন, চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাটগামী এক জোড়া ডেমু ট্রেন ও ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) মালবাহী চারটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন ট্রেন চালক ও গার্ড জানান, রেলের সংস্থাপন কোড অনুযায়ী রানিং স্টাফরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করলে বা ১০০ মাইলের বেশি ট্রেন চালালে একদিনের বেতনের সমপরিমাণ টাকা মাইলেজ বা রানিং ভাতা হিসেবে পেয়ে আসছেন। জনবল সংকটের কারণে চালক, গার্ড ও টিটিইরা দৈনিক ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ট্রেন চালান। প্রতি মাসে রানিং স্টাফরা ১১ হাজার মাইলের মাইলেজ ভাতা পেতেন। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ‘আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমে’ তাদের মাইলেজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তিন হাজার মাইলের বেশি দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। তিন হাজার মাইলের বেশি ট্রেন চালালেও তারা বেশি মাইলের জন্য কোনো ভাতা পাবেন না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বেসিকের সঙ্গে ৭৫ শতাংশ টাকা যোগ হবে না। এটি রেলওয়ে আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে জানান ট্রেন চালকরা। এটি বাস্তবায়ন করা হলে মাইলেজ সুবিধা থেকে চালক-গার্ডরা বঞ্চিত হবেন। নতুন এই নিয়মে রেলওয়ে রানিং স্টাফরা ক্ষুব্ধ উঠেছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে আগের নিয়মে মাইলেজ ভাতার জন্য ট্রেন চালকরা ৮/৯ মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
মাইলেজ জটিলতা নিরসনের দাবিতে আজ থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত গতকাল বৈঠকে বিষয়টি সুরাহা হলে আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়।