বারবার তাগাদা দেয়ার পরও সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বকেয়া পৌরকর (গৃহকর ও রেইট) পরিশোধ না করায় মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। পৃথক ৩০টি মন্ত্রণালয়ে উপানুষ্ঠানিক পত্র (ডিও লেটার) দেন তিনি। এতে বকেয়া পৌরকর পরিশোধের জন্য অধীনস্থ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ মঞ্জুরি করার অনুরোধ করা হয়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ৩৩টি মন্ত্রণালয়ের অধীন নগরে ২৭৩টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত চসিক পৌরকর বাবদ ২৩৩ কোটি ৮৪ লাখ ৪২ হাজার ১৯০ টাকা পাবে। বকেয়া পরিশোধে চসিকের রাজস্ব শাখা থেকে দাবি বিল জারি করা হয়। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গেও ব্যক্তিগতভাবে যোগযোগ করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে চসিককে জানানো হয়, নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পৌরকর পরিশোধ করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে বেশি বকেয়া রয়েছে এমন ৩০ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বরাবর উপানুষ্ঠানিক পত্র দেন মেয়র।
জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য ভারত গেছেন মেয়র। তবে যাওয়ার একদিন আগে চিঠিগুলোতে স্বাক্ষর করেন তিনি। চিঠি দেয়ার বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করে গতকাল সোমবার ভারত থেকে মুঠোফোনে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, চিঠিতে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখার স্বার্থে বকেয়াসহ হাল পৌরকর পরিশোধের নিমিত্তে অধীনস্থ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়ার জন্য বলেছি। বকেয়া পরিশোধ না করলে সামনে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা আহ্বানের ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান মেয়র।
তিনি বলেন, ২০১০ সালের এসেসমেন্টের ট্যাঙও পরিশোধ করেনি অনেক প্রতিষ্ঠান। তাদেরকে অনেকবার চিঠিও দিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবেও যোগাযোগ করা হয়েছে। সেটা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়কে জানালাম।
এদিকে চিঠিতে মেয়র লিখেন, চসিকের আয়ের মূল উৎস পৌরকর। নগরবাসীর সার্বিক সেবা প্রদান নিশ্চিতকল্পে কর্পোরেশনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি নিয়মিত পরিশোধ, নগরের আবর্জনা অপসারণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ, সড়ক আলোকায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, খাল খনন ও নালা-নর্দমা সংস্কারপূর্বক জলাবদ্ধতা নিরসন ইত্যাদি বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সিংহভাগ ব্যয় পৌরকর থেকে নির্বাহ করা হয়। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সিটি কর্পোরেশনকে নিজেদের আয় বাড়িয়ে স্বনির্ভর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ ও নাগরিক সেবা দিতে হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরে সরকারি এক হাজার ৫১৬ টি হোল্ডিং আছে। সিটি কর্পোরেশন অ্যাক্ট ২০০৯ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই চসিক মোট ১৭ শতাংশ পৌরকর আদায় করে থাকে। তার মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাঙ (গৃহকর), ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন রেইট এবং ৭ শতাংশ আর্বজনা অপসারণ রেইট রয়েছে।