বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে রাশিয়া, জাপান ও চীন। প্রকল্পগুলো যেমন বড়, এসবের ঋণের পরিমাণও বড়। আগামী ২০২৪ ও ২০২৬ সালে এসব দেশের ঋণ পরিশোধে বড় একটি ধাক্কা আসবে। তাই এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বৃহৎ বিশটি মেগা প্রকল্প : প্রবণতা ও পরিস্থিতি শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এ আহ্বায়ক বলেন, বাংলাদেশের ২০টি মেগা বা বড় প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে ২০২৪ ও ২০২৬ সালে। এই ঋণের সবচেয়ে বড় অংশ যাবে রাশিয়া, জাপান ও চীনের কাছে। মেগা প্রকল্পে ঋণ পরিশোধের সময় এগিয়ে আসছে, যা অর্থনীতির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের ২০টি মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক অর্থায়ন সাশ্রয়ীভাবে হয়েছে, এটা বড় সন্তোষের জায়গা। এসব প্রকল্পে ৪৫টি ঋণ প্যাকেজের মধ্যে পাঁচটি অনুদান, ৩৩টি সাশ্রয়ী ঋণ প্যাকেজ, আধা সাশ্রয়ী দুটি ও বাণিজ্যিকভাবে নিতে হয়েছে পাঁচটি ঋণ প্যাকেজ; যা চীন থেকে এসেছে। অর্থায়নটা ভালো হয়েছে বলতে হবে। পরিমাণের হিসাবে চীন তৃতীয় হলেও দায়-দেনা পরিশোধের সময়সূচি হিসাবে দেশটিকে সবচেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক দায়-দেনা ১৭ শতাংশে নিচে ও অভ্যন্তরীণ দায়-দেনা ১৭ শতাংশের ওপরে।
লক্ষণীয় হলো- এটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০১৮ সালের পর দায় দেনা আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। আর শীর্ষ ২০টি প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের বড় ধাক্কা আসবে ২০২৪ ও ২০২৬ সালে। ঋণ পরিশোধের সবচেয়ে বড় অংশ ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ যাবে রাশিয়ার কাছে, এরপর জাপানে যাবে ৩৫ শতাংশ এবং চীনের কাছে প্রায় ২১ শতাংশ। অংকের হিসাবে চীন তৃতীয় হলেও দায়-দেনা পরিশোধের যে সময়সূচি, তাতে সবচেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে চীনকে। বিরাট ধাক্কা সামলাতে কর আহরণ বাড়াতে হবে। কারণ কর জিডিপির পরিমাণ এখনও দশের নিচে।
এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, সাদা চোখে দেখতে পাচ্ছি দায়-দেনার বড় ধাক্কা ২০২৪ ও ২০২৬ সালে আসবে। আমার বড় উদ্বেগের বিষয় সরকার ঋণের ৫০ শতাংশ নিয়েছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। ওটা পরিশোধ না করলে ব্যাংকগুলো তারল্য পাবে না। অন্যদিকে যেসব প্রকল্প শুরু হয়নি, অতি জরুরি না হলে সেগুলো স্থগিত করা প্রয়োজন। আর যেসব প্রকল্প এগিয়ে চলছে কিন্তু ব্যয় কাঠামোর স্বচ্ছতা নেই, প্রকাশ্যভাবে দুর্নীতি কিংবা অতি মূল্যায়িত হয়েছে, সেগুলো পুনঃমূল্যায়ন করার প্রয়োজন। আর যেগুলো বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে সেগুলোর দায়-দেনার সময় কাঠামোকে পুনঃতফসিলিকরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি।
আইএমএফের ঋণ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে, এটাই শুভকর ছিল। আইএমএফের কাছে শুধু টাকার জন্য যেকোনো দেশ যায় না। এই প্রতিষ্ঠান পাশে থাকলে বিশ্ববাজারে আস্থার জায়গা তৈরি হয়।