সরকারকে দেওয়া প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে বিনিয়োগ থেকে আয় বাড়ায় গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক রেকর্ড ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৪৮ শতাংশ বেশি। বিপুল এ আয় থেকে ব্যয় ও কর দেওয়ার পর গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট মুনাফা হয় ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। এর আগের ২০২১–২২ অর্থবছরে আয় ছিল ছয় হাজার ২৯ কোটি টাকা এবং মুনাফা ছিল পাঁচ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। খবর বিডিনিউজের।
গত ২০২২–২৩ অর্থবছরের আয় ও মুনাফা উভয় ক্ষেত্রেই তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, নিট মুনাফা ১০ হাজার ৭৪৮ কোটির টাকার মধ্যে ১০ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ আট হাজার ৬০৮ কোটি টাকা আয় হয়েছিল ২০১৯–২০ অর্থবছরে। তার আগের ২০১৮–১৯ অর্থবছরে যা ছিল সাত হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। এদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২২–২৩ অর্থবছরের বার্ষিক হিসাবের প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানান মুখপাত্র।
ওই প্রতিবেদন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আয়, ব্যয় ও মুনাফার তথ্য জানা যায়। মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পর্ষদের এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সরকারকে দেওয়া ঋণের সুদ থেকে সাত হাজার কোটি টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যাংককে দেওয়া ঋণের সুদ হিসেবে দুই হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। অপরদিকে রিজার্ভ থেকে বিদেশি মুদ্রা বিনিয়োগ থেকে আয় করেছে ছয় হাজার কোটি টাকা। গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে মোট ঋণ নেয় এক লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়েছিল ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এর আগের ২০২১–২২ অর্থবছরে সরকার ও বাণিজ্যিক ব্যাংককে দেওয়া ঋণ থেকে সুদের আয় ছিল তিন হাজার ১০ কোটি টাকা এবং বিদেশি মুদ্রা খাতে বিনিয়োগ থেকে দুই হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।
আগের অর্থবছরের থেকে ২০২২–২৩ অর্থবছরে আয়ে যেমন উল্লম্ফন হয়েছে (১৪৮ শতাংশ বেড়েছে), তেমনি মুনাফা বেড়েছে চার হাজার ৯৭১ কোটি টাকা বা ৮৬ শতাংশ। ২০২১–২২ অর্থবছরে নিট মুনাফা হয়েছিল পাঁচ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদের বৈঠকে অর্থপাচার প্রতিরোধে আমদানিতে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের প্রকৃত মূল্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্লুমবার্গের একটি টার্মিনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে রিজার্ভ থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশকে দেওয়া অর্থের সুদহার লাইবর রেট এর বদলে বাংলাদেশ ব্যাংক র্নিধারিত ‘বেঞ্চমার্ক পদ্ধতি’ অনুসরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পাওয়া নগদ ফাইন্যান্সের ‘লাইসেন্স সমপর্ণ’ বৈঠকে গ্রহণ করা হয়। গত ১৭ মে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়ার পর ব্যবসা শুরুর আগেই কোম্পানিটি লাইসেন্স সমপর্ণ করেছে। নতুন এ লাইসেন্স পাওয়া নগদ ফাইন্যান্সে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি নগদ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ মিশুক একজন পরিচালক হিসেবে আছেন।