আরেকটি লজ্জার পরাজয়ে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়ে গেল সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। সফরের আগেই প্রথম সারির খেলোয়াড়রা সরে দাঁড়ানোয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ কার্যতঃ ভগ্ন শক্তির একটি দ্বিতীয় দল নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল। আর সে দলটির কাছেই পর পর টেস্ট ম্যাচে হেরে ‘হোয়াইটওয়াশড’ হলো টাইগাররা।
গতকাল ঢাকা টেস্টের চতুর্থ দিনে শেষ বিকেলে বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। একাই দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর জয়ের মধ্যে। কিন্তু দারুণ খেলেও শেষ পর্যন্ত আর নায়ক হতে পারলেন না তিনি। মিরাজকে ফিরিয়েই অসাধারণ এক জয়ের উল্লাসে মেতে উঠে ক্যারিবীয়রা। ঘরের মাঠে হতাশার হোয়াইটওয়াশে লজ্জায় লাল হলো বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিনে ১৭ উইকেটের পতন হয়েছে। আর এই সংখ্যা ধরে বাংলাদেশ কিনা হারলো সেই ১৭ রানের ব্যবধানেই। এ জয়ে ২-০ তে টেস্ট সিরিজ জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্পিন ঝলক আর ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ম্যাচ শেষ হয়ে গেল চতুর্থ দিনেই। শেষ ইনিংসে ২৩১ রান তাড়ায় বাংলাদেশের ৯ ব্যাটসম্যান স্পর্শ করেন দুই অঙ্ক। কিন্তু পঞ্চাশ ছাড়াতে পারেননি কেউ। ফিফটি জুটিও মোটে একটি। দল তাই অলআউট ২১৩ রানে। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে রাকিম কর্নওয়ালের শিকার ৪ উইকেট। এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে এক টেস্টে ৯ উইকেট পেলেন কোনো ক্যারিবিয়ান স্পিনার। ম্যাচের শেষও কর্নওয়ালের হাত ধরেই। শেষ জুটিতে মিরাজের দারুণ ব্যাটিংয়ে যখন জমে উঠেছে লড়াই, জোমেল ওয়ারিক্যানের বলে কর্নওয়ালের দুর্দান্ত ক্যাচে সমাপ্তি ঘটে সব উত্তেজনার। বাংলাদেশ ইনিংসের সব উইকেটই নেন ক্যারিবিয়ান স্পিনাররা। রানের হিসেবে টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট ব্যবধানের পরাজয় এটি। তবে খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারের সান্তনা হতে পারে না এটি। ২০১২ সালের পর এই প্রথম দেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশড হলো বাংলাদেশ। সেবারও ছিল ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষেই।
এই পরাজয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্টের মুখ আর দেখা হলো না বাংলাদেশের। অথচ খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পুরো ১২০ পয়েন্টের আশায় সিরিজ শুরু করেছিল দল। অনেক মোড় বদলের চতুর্থ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে। তাইজুল ইসলামের ৪ উইকেট আর নাঈম হাসানের ৩ উইকেটে ১১৭ রানেই গুটিয়ে যায় তারা। বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৩১। ২১৫ রানের বেশি তাড়া করে কখনোই টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনের স্পিন সহায়ক উইকেটে এবারও কাজটি ছিল ভীষন কঠিন। তবু আশা জাগায় তামিম ইকবালের ব্যাট। টার্নিং উইকেটে স্রেফ উইকেট আঁকড়ে না রেখে বল নতুন ও শক্ত থাকতেই দ্রুত রান তোলার কৌশল নেন তামিম। পেস-স্পিনে একের পর এক বাউন্ডারি আসতে থাকে তার ব্যাটে। দলের পঞ্চাশ হয়ে যায় একাদশ ওভারেই। কিন্তু এই আনন্দ একটু পরই বিষাদে রূপ নেয়। জুটি ভাঙতে বল হাতে নেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। ম্যাচের চিত্র বদল হতে থাকে সেখানেই। প্রথম বলেই তাকে উইকেট উপহার দেন সৌম্য সরকার।
তামিম ৯ চারে ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৪ বলে। তার পথচলা থামে সেখানেই। ব্র্যাথওয়েটেরই নিরীহ এক বলে আলতো ড্রাইভে ক্যাচ দেন শর্ট কাভারে। ফিরতে হয় তাকে প্যাভিলিয়নে। চা-বিরতির আগে আরেকটা বড় ধাক্কা হজম করে বাংলাদেশ। চরম হতাশার সিরিজে শেষ ইনিংসেও নাজমুল হোসেন শান্ত পারেননি অবদান রাখতে। যথারীতি তিনিও বিলিয়ে আসেন উইকেট। চা-বিরতির পরও চলতে থাকে সেই ধারা। কেবল মুশফিকুর রহিমের উইকেটই বলা যায় ভালো ডেলিভারিতে। অধিনায়ক মোমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন দাস, সবাই যেন উইকেট বিলিয়ে আসেন।
এক প্রান্ত থেকে টানা বোলিং করে যান কর্নওয়াল, ইনিংসের প্রায় অর্ধেক ওভার করেন একাই। অন্য পাশে ওয়ারিক্যানও খুঁজে পান ছন্দ। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হলেন তাইজুল ইসলাম, জয় থেকে তখনও ৬৮ রান দূরে বাংলাদেশ। নাঈম হাসান ও আবু জায়েদকে নিয়ে তবু লড়াই চালিয়ে যান মিরাজ। জুটি ভাঙতে বল হাতে নিয়ে আবারও সফল হন ব্র্যাথওয়েট। এবার তার শিকার ১৪ রান করা নাঈম হাসান। মিরাজ তবু হাল ছাড়েন না। শেষ সঙ্গীকে নিয়ে কর্নওয়ালের পরপর দুই ওভারে মারেন একটি করে ছক্কা ও চার। টিকে থাকে আশা। কিন্তু পুরো জ্বলে ওঠা আর হয় না। মিরাজ পারলেন না উইকেটে বিরাজ করতে। ৩১ রানে স্লিপে ধরা পড়ে হতাশায় থমকে দাঁড়ান মিরাজ। ক্যারিবিয়ানদের তখন সে কি উল্লাস। নিয়মিত অধিনায়ক ও সেরা দল ছাড়াই বিরুদ্ধ কন্ডিশন ও উইকেটে সিরিজ জয়, ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো, নিশ্চিতভাবেই নিকট অতীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা সাফল্য। গত কয়েক বছরে জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তানের পর এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পর পর এই হার টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দীনতাকে আরেকবার ফুটিয়ে তুললো। সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৪০৯, বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৯৬,ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ১১৭, বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ২১৩।