চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত বন্দরটিলা নগর মাতৃসদন হাসপাতাল। হাসপাতালটির পঞ্চম তলায় প্রসূতিদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। গত কয়েক মাস ধরে নষ্ট হয়ে আছে হাসপাতালটির লিফট। ফলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে দুর্বিষহ কষ্ট হচ্ছে সেবা নিতে আসা প্রসূতিদের। এরকম লিফট নষ্ট হয়ে আছে মোহরা ছাপা মোতালেব সিটি কর্পোরেশন নগর মাতৃসদন হাসপাতালেরও। হাসপাতালটির জেনারেটরও নষ্ট। এদিকে সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত সিটি কর্পোরেশন মেমন মাতৃসদন হাসপাতালটিও নানা সমস্যায় জর্জরিত। হাসপাতালটির যেসব কেবিন রয়েছে তার বেশিরভাগ এসি নষ্ট। টাইলস উঠে গেছে। সবচেয়ে বাজে অবস্থা বিরাজ করছে এ হাসপাতালের টয়লেটগুলোতে। আরো অবাক করা বিষয় প্রয়োজনীয় সার্জিক্যাল বা মেডিকেল যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে সেখানে।
শুধু মাতৃসদন হাসপাতাল দুটি নয়। চসিক পরিচালিত ৫৩টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়েছে অবকাঠামোগত নানা সমস্যা। এর মধ্যে বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। টয়লেটের অবস্থাও বেহাল। কোনোটিতে আছে পানির সমস্যা এবং কোনোটিতে আছে বিদ্যুতের সমস্যা। চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট তো আছেই। অবস্থা দেখে মনে হবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোরই ‘চিকিৎসা’ প্রয়োজন।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা থাকলেও আর্থিক সংকট থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে চসিকের পদস্থরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো পরিচালনায় প্রতি বছর ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়। অথচ এ খাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় না। এদিকে দিন দিন রোগীর চাপ বাড়ছে। বিপরীতে সংকট তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামেরও।
সম্প্রতি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ঘিরে দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ নিচ্ছেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এর অংশ হিসেবে মাতৃসদন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ক্লিনিক্যাল যন্ত্রপাতি সংগ্রহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রয়াত সাবেক সিটি মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী যে অবস্থায় হাসপাতালগুলো রেখে গেছেন, এরপর কেউ হাত দেয়নি। চরম অব্যবস্থাপনার কারণে সেগুলোর বেহাল দশা হয়ে গেছে। মেমনে যতগুলো টয়লেট আছে সবগুলোই নষ্ট। কাট্টলী মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতালের অবস্থাও খারাপ ছিল। আমি অনুরোধ করার পর সাবেক মেয়র মনজুর আলম সেখানে সংস্কার করছেন। এছাড়া অন্যান্য হাসপাতালগুলোর যে অবস্থা সেগুলো সংস্কার করতে গেলে কয়েক কোটি টাকা খরচ হবে। এ মুহূর্তে আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে নিজস্ব অর্থায়নে ঠিক করা সম্ভব হবে না। তাই মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছি। আগামী ৮ ও ৯ তারিখ ঢাকায় থাকবো। তখন বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীর সাথে কথা বলবো।
এক প্রশ্নের জবাবে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ৪১ ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশনের যতগুলো মাতৃসদন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে সরকারি সহায়তা পেলে সেগুলো নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আরো বেশি অবদান রাখবে।
এদিকে চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত ১০০ শয্যার একটি মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল, ১০০ শয্যার একটি জেনারেল হাসপাতাল, ৫০ শয্যার তিনটি মাতৃসদন হাসপাতাল, ৫৩টি দাতব্য চিকিৎসালয় ও নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩৩৫টি ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র, ১০টি হোমিওপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসালয় রয়েছে। গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো থেকে ৫৫ লাখ ৫৪ হাজার ২৭৯ জন স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৩৪ লাখ ৭৪ হাজার ৭২৫ জন ইপি-আই থেকে সেবা নিয়েছেন।
আবু ইসহাক নামে বন্দরটিলা এলাকার এক বাসিন্দা দৈনিক আজাদীকে বলেন, এক সময় সিটি কর্পোরেশনের মেটারনিটি হাসপাতালগুলো প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদানে নগরবাসীর আস্থা অর্জন করেছিল। সারা বছরই প্রসূতি মায়েদের ভিড় লেগে থাকতো। আমি দেখেছি অনেক দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ এখানে সেবা নিতে আসতেন। সর্বোপরি চিকিৎসা ব্যবস্থার দক্ষতা ও সক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তীতে নানা কারণে সে সুনাম আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।