স্ত্রীসহ মহল মার্কেটের মালিক জসিম উদ্দিনকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

৮৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

পদ্মা ব্যাংকের ৮৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের মামলায় নগরীর লালদীঘির এক ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। ওই ব্যবসায়ী হলেন, মহল মার্কেটের মালিক জসিম উদ্দিন আহমদ। তার স্ত্রী হলেন, তানজিনা সুলতানা (জুহি)। গতকাল চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ব্যাংক ও দায়িকদের পৃথক পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক ব্যবসায়ী দম্পতির বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, আদালতের আদেশ অনুযায়ী ১২ কোটি টাকা দাখিলে ব্যর্থতায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে গত ১৭ মার্চ জসিম উদ্দিন আহমদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করা হয়। পাশাপাশি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েও আবেদন করা হয়। অন্যদিকে জসিম উদ্দিন আহমদ আপত্তি দাখিলের জন্য সময়ের আবেদন করেন এবং ২০২২ সালের ৪ অক্টোবরের পুনঃতপশীল অনুযায়ী আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ৫ কোটি টাকা জমা প্রদানপূর্বক অবশিষ্ট ২৭ কোটি টাকা প্রতিমাসে ৫০ লাখ টাকা করে ৫৪ কিস্তিতে আদায়ের জন্য সময়ের আবেদন করেন।

ব্যাংকের পক্ষের আইনজীবী নিবেদন করেন, আজ পর্যন্ত ১২ কোটি টাকা দাখিলের জন্য আদালতের আদেশ দায়িকরা প্রতিপালন করেননি। দায়িকরা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি। দায়িকদের কাছে ব্যাংকের বর্তমান পাওনা ৯০ কোটি টাকার বেশি। দায়িকরা সামর্থ্য থাকা সত্বেও খেলাপি ঋণ পরিশোধ করছেন না। ইতিপূর্বে

দায়িকদেরকে বিপুল পরিমাণ সুদ মওকুফ করা সত্বেও কিস্তি মোতাবেক টাকা পরিশোধ না করায় সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। যে সম্পত্তি বন্ধক আছে তা দিয়ে ব্যাংকের পাওনা আদায় হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে বিক্রির জন্য ধার্য তারিখে দায়িক জসিম উদ্দিন আহমদ ৩ কোটি টাকা পরিশোধের অঙ্গীকারে নিলাম স্থগিতের জন্য আবেদন করলেও কোনো টাকা পরিশোধ করেননি। বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে বিক্রির জন্য কোনো দরপত্রও পাওয়া যায়নি। জসিম উদ্দিন আহমদ আদালতে উপস্থিত হয়ে একদিনের মধ্যে ৬ কোটি টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও গত ২৮ মার্চ কেবল ১ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। আজকে ১২ কোটি টাকা দাখিলের জন্য দিন ধার্য থাকলেও দায়িকরা কোনো টাকা পরিশোধ করেননি। দায়িকরা অত্যন্ত সামর্থ্যবান ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। জসিম উদ্দিন আহমদ দানবীর হিসেবে নিজ উপজেলায় ৫০ হাজার পরিবারের মাঝে ইফতার বিতরণ, ১০০ মেয়ের বিয়ের খরচ প্রদান ও ১০০ টি মসজিদে ৫ লাখ টাকা করে অনুদান প্রদানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন। ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করে জসিম উদ্দিন আহমদ দেশে বিদেশে বিলাসী জীবন যাপন করছেন। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারায় ডিক্রিদার ব্যাংক রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হিসেবে দায়িকদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান না করলে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় অযোগ্য হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আহমদের আইনজীবী নিবেদন করেন, জসিম উদ্দিন আহমদ একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে দুবাই এবং চট্টগ্রামে নানাবিধ ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। তিনি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এনে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। ব্যবসায়িক বিপর্যয়ের কারণে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। দায়িকরা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি নয়। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করলে দায়িকদের মৌলিক অধিকার লক্সঘন হবে এবং ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

আদালত সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষে মহল মার্কেটের মালিক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০২০ সালে অর্থঋণ মামলা করে পদ্মা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা। মামলায় গত বছরের ২৯ জানুয়ারি ডিক্রি প্রদান করে আদালত এবং সেখান থেকেই এ জারি মামলার উদ্ভব হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরুমায় অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধভোগান্তি এড়াতে আগেই ছুটছেন অনেকে