অমর ২১ বইমেলা ’২৪–এ প্রকাশিত বিশিষ্ট লেখক, গ্রন্থকার, বহু সংকলনের সার্থক সম্পাদক নিজামুল ইসলাম সরফীর– ‘ব্যক্তিত্বে সৃষ্টিতে চট্টগ্রাম’ গ্রন্থটি চট্টগ্রামের লেখক গুণীজন সমাজ সংস্কারকদের মধ্যকার ৬৪ জনকে নিয়ে, তাঁদের সাহিত্য–সৃষ্টি, সমাজকর্ম নিয়ে রচিত একটি অনবদ্য গ্রন্থ। এঁরা এমন কিছু মানুষ যাঁরা হয় সরফীর সঙ্গে স্কুল–কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে পরিচিত কিম্বা সামাজিক–সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পথ চলায় পরিচিত। উল্লেখ্য তাঁরা এই গ্রন্থ প্রকাশনার সময়েও প্রত্যেকে জীবিত আছেন। সরফী নিজেও তাঁর গ্রন্থের প্রাক্কথন তথা ‘কৈফিয়ত’–এ বলেছেন এই ৬৪ জন তাঁর একান্ত নিজের পছন্দের জায়গা থেকে আহরিত। সুতরাং এরপরে গ্রন্থের বিষয়বস্তুর তালিকা নিয়ে আর কোনো কথা থাকে না। ‘তৃতীয় চোখ’ প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার আলী প্রয়াস কর্তৃক প্রকাশিত ১৫০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি উন্নত মানের ১০০ গ্রাম অফসেট কাগজে ঝকঝকে ছাপায় সুহৃদ রাহমান– কৃত রুচিশীল প্রচ্ছদে এবং উত্তম মজবুত বাঁধাই–এ সজ্জিত। এর শুভেচ্ছামূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ৩০০ টাকা। চট্টগ্রামের অনেক (এখানে ৬৪ জন) সৃষ্টিশীল মানুষের জীবনের কর্মকাণ্ড সংক্ষেপে এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে যা দিয়ে চট্টগ্রামের সমাজ জীবনের সংস্কার ও জাতীয় জীবনে তাঁদের সৃষ্টিশীলতার তৎপরতা ও প্রভাব সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
১৯০৪ সালে শিবনাথ শাস্ত্রী লিখেছিলেন ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’ নামক অমূল্য গ্রন্থ যাতে ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালির নবজাগরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের ভূমিকা স্থান পায় যা সমকালীন সমাজ সংস্কৃতি রাষ্ট্রনীতির এবং তৎ–নবজাগরণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। শুরুতে শিবনাথ শাস্ত্রী ১৮৯৮ সালে রামতনু লাহিড়ীর শ্রাদ্ধবাসরে গিয়ে সকলের অনুরোধ পেয়ে এর তিন বছর পরে ১৯০১ সালে লেখা শুরু করেছিলেন রামতনু লাহিড়ীর জীবনী, পরে দেখলেন সে–জীবন কাহিনী একটা সময়কালকে ধরে রেখে তার ইতিহাস তার কর্মকাণ্ড ও নবজাগরণকে বর্ণনা করছে। শিবনাথ শাস্ত্রী পরে তাই এ–অমূল্য গ্রন্থের নামকরণে রামতনু লাহিড়ীর সঙ্গে যুক্ত করলেন আরো দুটো শব্দ, এবং এর নাম হয়ে উঠলো ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ‘- যা বাঙালির ইতিহাসের একটি অমূল্য অধ্যায়কে ধরে রেখেছে। গ্রন্থটি এমনকি ১৯০৭ সালে স্যার লোপার লেথব্রিজ কর্তৃক ইংরেজিতে অনূদিতও হয়েছে।
নিজামুল ইসলাম সরফীর গ্রন্থটি চট্টগ্রামের এমনকি জাতীয় ইতিহাসের প্রায় তিন দশকের সমকালীনতাকে কিয়দংশে হলেও ধরে রেখেছে বা তার প্রতিনিধিত্ব করেছে; এতে হয়তো সম্পূর্ণতা নেই তবে যা আছে তা একান্ত বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। আগামীতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের চট্টগ্রামের সামাজিক সাংস্কৃতিক সাহিত্য ও সৃষ্টিশীল জগতের খোঁজ নিতে গেলে বা বৃহত্তর কোনো ইতিহাসে এ–অঞ্চলের ইতিহাস সম্পৃক্ত করতে গেলে সরফীর এই গ্রন্থেও তার অনুসন্ধান নিতে হবে। এছাড়া চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সৃষ্টিশীল ইতিহাস সন্ধানে উন্মুখ উৎসুক পাঠকের ক্ষুধা নিবারণ করবে এ–গ্রন্থ।
এই অনন্যসাধারণ সৃষ্টিকর্মের জন্য সরফীকে শুভাভিনন্দন। সরফীর লেখালেখির আগ্রহ চর্চা অনুশীলন আরো উন্নত বিকশিত হোক, এই কামনা।