সুবিধাবঞ্চিত নারীরা পেলেন মোড়া তৈরির উপকরণ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | বুধবার , ৩১ মে, ২০২৩ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার হাতিয়াপাড়ার বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন স্বামীকে হারিয়েছেন বেশ কয়েকবছর আগে। ছেলেমেয়েরা বিয়ে করে যার যার মতো আলাদা থাকছেন। প্রয়াত স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িতে বসবাস তার। দীর্ঘ বছর ধরে মোড়া তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এ বৃদ্ধা। শুধু সুফিয়া খাতুনই নয়, মোড়া তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন স্বামী পরিত্যক্তা খালেদা বেগম, বিধবা রোকেয়া বেগম, হাসিনা বেগম ও হতদরিদ্র আনোয়ারা বেগমসহ শতাধিক নারী। মোড়া তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও অর্থ সংকটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় এমন ৪৮ জন বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও সুবিধাবঞ্চিত নারীর প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন। মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত এসব নারীদের প্রত্যেককে ১০ জোড়া মোড়া তৈরির উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিকের বেত ও টায়ার দেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মাটিরাঙ্গার হাতিয়াপাড়ায় উপকারভোগী নারীদের হাতে মোড়া তৈরির উপকরণ তুলে দেন ফেরদৌসী। এ সময় খাগড়াছড়ির নারী উদ্যোক্তা বীনা ত্রিপুরা ছাড়াও উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত সোমবার খাগড়াছড়ির নয় মাইল এলাকায় ৫২ জন পাহাড়ি নারীকে ৫ কেজি করে কোমর তাঁত বোনার সুতা দেন ফেরদৌসী পারভীন।

মোড়া তৈরির উপকরণ পাওয়ার পর সুফিয়া খাতুনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ছেলেরা খবর রাখে না। মেয়েরাও স্বামী নিয়ে নিজের সংসারে থাকে। এই বয়সে মোড়া বিক্রির টাকাতেই নিজের ভরণপোষণ করছি। কিন্তু আর্থিক সংকটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে কষ্ট হতো। ১০ জোড়া মোড় তৈরির উপকরণ পেয়েছি। এখন আমার একটা পুঁজি তৈরি হলো। রোকেয়া বেগম বলেন, আল্লাহ নিজেই আমাদের মতো গরীবদের সাহায্যের জন্য ম্যাডামকে পাঠিয়েছেন। আমরা সারাজীবন তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। অপর বিধবা হাসিনা বেগম দুহাত তুলে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, ম্যাডাম যা করলেন আজকের দুনিয়ায় কেউ কারও জন্য করে না।

কোমর তাঁত বোনার সুতা পাওয়া হেমালিকা ত্রিপুরা বলেন, ম্যাডামের দেয়া সুতায় কোমর তাঁত বুনে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরাও তাদের মতো করে ঘুরে দাঁড়াবো। তিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার পরিচয় দিয়েছেন। তার এ দান আমরা কখনো ভুলবো না। এর আগেও পাহাড়ি নারীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ করে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আলাউদ্দিন লিটন বলেন, কোনো ধরনের স্বার্থ ছাড়াই যে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে তার উদাহরণ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন। কয়েকশ মাইল দূরের বাসিন্দা হয়েও এখানকার হতদরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করতে প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীনের এমন উদ্যোগ অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।

শিক্ষকতাকালীনও নিজের বেতনে মানুষের জন্য কাজ করার কথা জানিয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন বলেন, সুবিধা বঞ্চিত নারীদের জন্য কিছু করার তাগিদ সবসময়ই অনুভব করি। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করতেই আমি নিজ উদ্যোগে এসব কাজ করছি। একজন নারী যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তাহলে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হবে এমন ভাবনা থেকেই প্রান্তিক জনপদের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতেই তার এ প্রচেষ্টা বলে জানালেন প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল কমিটির প্রতিবাদ সভা
পরবর্তী নিবন্ধআইআইইউসির ফ্যাকাল্টি অব আর্টসের সেমিনার