সাহিত্য চর্চায় সামাজিক সংগঠনের ভূমিকা

স. ম . জাফর উল্লাহ | শনিবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি ও সামাজিক উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে যুব সমাজের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা বাঙালি সমাজ ব্যবস্থায় এক গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস। প্রতিটি গ্রাম পাড়া মহল্লায় যুবক কিশোর সংঘবদ্ধভাবে সমাজের বিভিন্ন কর্মকান্ড বিয়ে মেজবান পূজা মহোৎসব গরীব দুস্থ অসহায়দের সাহায্য প্রকৃতিক দৈব দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য ধর্মীয় সামাজিক অনুষ্ঠানাদি, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রতিষ্ঠান রাস্তা ঘাট অবকাঠামোগত উন্নয়নে যুব সমাজের অনেক অবদান রয়েছে। গ্রামের যুব সমাজকে সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে সামাজিক সংগঠনের বিকল্প নেই। যুব সমাজের একতা ঐক্য সংহতি সুদৃঢ় শক্তিশালী ভীতের উপর প্রতিষ্ঠিত করে সাংগঠনিক রুপ দিতে সমিতি সংঘ ক্লাব ইত্যাদি বিভিন্ন নামে সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়।এসব সংগঠনে গ্রামের শিক্ষার্থী যুবক কিশোর সকল শ্রেণীর যুবকদের সদস্য হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয়। বর্তমানে পারিবারিক সামাজিক ধর্মীয় প্রাতিষ্ঠানিক সাংগঠনিক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানাদি ডেকোরেশান নির্ভর বা ডেকোরেশানের বিকল্প চিন্তা করা যায় না। তখনকার দিনে এসব কিছুর সম্পূর্ণ আয়োজন সামাজিক সংগঠনগুলো সামাজিক দায়িত্ব হিসাবে পালন করত। সামাজিক সংগঠনগুলো এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা গ্রাম্য বিচার গরীব দুঃস্থ অসহায়দের সাহায্য শিক্ষা চিকিৎসা গ্রামীণ রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন মেরামত জনকল্যাণ মূলক সব ধরনের কাজ সংগঠনের সদস্যরা সম্পন্ন করত। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা মূলত এসব সংগঠনের মূল চালিকা শক্তি ছিল বিধায় সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি সাহিত্য চর্চার অন্যতম লক্ষ্য ও মাধ্যম ছিল এসব সংগঠন। অধিকাংশ সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ডের সাথে শিক্ষা ও সাহিত্য নিয়ে নিয়মিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের রুটিন ওয়ার্ক ছিল ।সামাজিক সংগঠনগুলোর অনেক সংগঠন ছিল সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত।সমাজের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের সাথে বিনোদন সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান যেমন গ্রামীণ খেলাধূলা, বনভোজন, ক্রীড়া প্রতিযোগীতা, যাত্রা, নাটক, বির্তক প্রতিযোগীতা, দেয়ালিকা প্রকাশ, ম্যাগাজিন, স্মরণিকা বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ প্রচার জাতীয় দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি সাংগঠনিকভাবে পালন করা হত। সদস্যদের বইমুখী বা বই পড়তে আগ্রহী করার লক্ষ্যে পাঠাগার লাইব্রেরি স্থাপনের মাধ্যমে সদস্যদের বইপড়া বাধ্যতামূলক ছিল। মাসিক দেয়ালিকা প্রকাশ প্রচারে সদস্যদের নানা বিষয়ের উপর লিখা লিখতে উৎসাহ ছিল লক্ষ্য করার মত। তৃণমূল পর্যায় থেকে শিশু কিশোর যুবকদের কবিতা গল্প ছড়া গান কৌতুক ইত্যাদি ক্ষুদ্র পরিসরে নিজের সাহিত্য চর্চার সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের ভূমিকা রাখত সংগঠনের প্রকাশনা বিভাগ। যার ধারাবাহিকতায় অনেক প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক, কবি, ছড়াকার, প্রাবন্ধিকের জীবনের প্রথম লেখার হাতেখড়ি ছিল সামাজিক সংগঠনের ক্ষুদ্র প্রকাশনা। যুগের বিবর্তনে পরিবর্তন ঘটেছে প্রত্যেক ক্ষেত্রে এর ছোঁয়া লেগেছে এখানেও। এখন ও গ্রামে নগরে এসব সংগঠনের কিছু অস্তিত্ব দেখা গেলেও অতীতের সেই উৎসাহ উদ্দীপনা যুব সমাজের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়না নেই সামাজিক কল্যাণে কোন কর্ম তৎপরতা। বর্তমান প্রজন্ম বইপড়া লেখালেখি সাহিত্য নিয়ে আড্ডা দেয়ালিকা ম্যাগাজিন সাময়িকী প্রকাশ প্রচারে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড থেকে পরিবেশ গত কারণে বঞ্চিত। প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে মোবাইল ইন্টারনেট জগতে বিচরণ করতে গিয়ে জ্ঞান চর্চা সীমিত হয়ে পড়েছে অবসরে বই পড়া লেখালেখি সাহিত্য নিয়ে আড্ডা আলোচনা এসব এখন নির্বাসনে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি সংগঠনের পাঠাগার অযত্নে অবহেলায় তালাবদ্ধ। তবে আশার কথা হচ্ছে দিনের পরিবর্তনে সবকিছুর নতুনত্ব রূপ লাভ করলেও শহর নগর গ্রামের কিছু সাহিত্যানুরাগী সাহিত্যপ্রমী এখন ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে সাহিত্য প্রসারে কাজ করছে। সুসংগঠিতভাবে না হলেও বিছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা এলাকার সাহিত্যপ্রমীদের বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন ও তাদের কর্মকাণ্ড নতুন প্রাণের সঞ্চার সৃষ্টি হচ্ছে। সামাজিক সংগঠনের নিষ্ক্রিয়তায় এসব সংগঠন সাহিত্যের পাশাপাশি বিভিন্ন মানবিক জনকল্যাণমূলক কাজেও ভূমিকা রাখছে। স্থানীয় ও জাতীয় পত্র পত্রিকায় নিয়মিত অনিয়মিত নানা বিষয়ের উপর যাঁরা লেখালেখি করে ও এলাকা বা জেলা ভিত্তিক মাসিক ত্রৈমাসিক পত্র পত্রিকা সাময়িকী ম্যাগাজিন প্রকাশ প্রচার করে সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার নিরলসভাবে কাজ করছে জাতির সাহিত্য অঙ্গনে তাদের অবদান খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

স্কুল কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অনেকের সাহিত্য চর্চার প্রতিভা রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন গুলোর নিয়মিত সাহিত্য চর্চার কোন সুযোগ উপযুক্ত পরিবেশ বা পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় সম্ভাবনাময় অনেক প্রতিভা মূকুলে হারিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় ভাবে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সমাজসেবা অধিদপ্তর স্ব স্ব নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত দেয়ালিকা সাময়িকী প্রকাশ প্রচারে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম থেকে সুলেখক সাহিত্যিক সৃষ্টির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা উপজেলায় যে সব সাহিত্য সংগঠন সাহিত্যপ্রমীদের সংগঠিত করে সাহিত্য চর্চার ক্ষুদ্র প্রয়াস চালাচ্ছে তাদের এ প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক সমাজ আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসলে আমাদের সাহিত্য অঙন অনেক সমৃদ্ধ হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সাহিত্য চর্চার উপর গুরুত্বারোপ করার বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুয়াশায় ভরা সকাল
পরবর্তী নিবন্ধঅর্থনীতি ও সম্ভাবনার আরেক দিগন্ত