সার্বজনীন পেনশন সুবিধা চালু করতে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে সরকার, যাতে আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সবার মতামত দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে (https://mof.portal.gov.bd/site/page/dd8f0829-6531-414e-9a4c-a5354f542986) জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২২ এর খসড়া প্রকাশ করা হয়। খসড়া আইন অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে ১৮ বছরের বেশি ও ৫০ বছরের কম বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক এই পেনশন ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতে পারবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা অংশ নিতে পারবেন। সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা এই পেনশন ব্যবস্থাপনার বাইরে থাকবেন। খবর বিডিনিউজের।
দেশের ষাটোর্ধ্ব সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই আইন হচ্ছে। বর্তমানে দেশে শুধু সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পেলেও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে।
খসড়া অনুযায়ী, একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য সমন্বয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে। নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।এছাড়া অর্থমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে একটি গভর্নিং বোর্ড গঠন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থবিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, সমাজ কল্যাণ সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশি কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শ্রম সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙচেঞ্জ কমিশনের সচিব, এফবিসিসিআই সভাপতি, বাংলাদেশ এমপ্লোয়ার্স ফেডারেশনের সচিব, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সভাপতি এই বোর্ডের সদস্য হবেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিল গঠন করা হবে যাতে সরকারের অনুদান, এই আইনের অধীন আদায়যোগ্য ফি ও চার্জ, সেবা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ, সরকারের পূর্ব অনুমোদনক্রমে গৃহিত ঋণ এবং অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া অর্থ থাকবে।
# কমপক্ষে ১০ বছর ধরে চাদা দাতার মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। ৬০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর পেনশন পাওয়া শুরু করবেন।
# প্রতিটি চাঁদাদাতার জন্য পৃথক হিসাব নম্বর থাকবে। কেউ চাকরি পরিবর্তন করলেও পূর্ববর্তী হিসাব নম্বর নতুন কর্মস্থলে যুক্ত হবে, নতুন করে হিসাব খুলতে হবেনা।
# মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত হওয়ার পর মাসিক ও ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়া যাবে। অগ্রীম ও কিস্তিতেও চাঁদা দেওয়া যাবে। বিলম্ব হলে বিলম্ব ফি দিতে হবে, ওই টাকা চাঁদাদাতার হিসাবেই জমা থাকবে। # পেনশনাররা আজীবন বা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
# পেনশনে থাকা অবস্থায় ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়কাল (মূল পেনশনারের ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়া) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। # কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে পেনশনার মারা গেলে তার জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনির কাছে ফেরত যাবে।
# পেনশন তহবিলে জমা করা অর্থ এককালীন উত্তোলন করার সুযোগ থাকবেনা। তবে জমাকৃত অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে যা ধার্যকৃত ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। ফিসহ পরিশোধিত অর্থ চাঁদাদাতার নিজ হিসাবেই (অ্যাকাউন্টে) জমা হবে। # পেনশনের চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কররেয়াতের জন্য বিবেচনা করা হবে। মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত হবে। # সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি অথবা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্ত্বশাসিত অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারবে। এক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেবে। # নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকদের অথবা দুস্থ চাঁদাদাতাদের ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলের মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসাবে দেব। এক্ষেত্রে সময়ে সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
পেনশন ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বজনীন পেনশন তহবিল গঠন করা হবে। তহবিলের অর্থের উৎস হিসাবে নিবন্ধিত চাঁদাদাতাদের চাঁদা, প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশগ্রহণমূলক চাঁদা, বিনিয়োগকৃত অর্থের পুঞ্জিভূত মুনাফা, সরকারের অনুদান ও অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া অর্থ থাকবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এর আগে বলেছিলেন, সবার পরামর্শ নিয়ে এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।