পারল না সাকিবের রংপুর রাইডার্স। বিদায় নিতে হলো ফাইনালের আগে। দুই সেরা তারকা সাকিব–তামিম লড়াইয়ে এবার জয় তামিমের। বন্ধু থেকে শত্রুতে পরিণত হওয়া তামিম–সাকিব লড়াইয়ে সাকিবের রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে বিপিএলের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে তামিমের ফরচুন বরিশাল। দু দলই এবারের বিপিএলে বেশ তারকা সমৃদ্ধ দল। আর তারকার সমাবেশের লড়াইয়ে রংপুর পারল না বরিশালের সাথে। তৃতীয়বারের বিপিএলের ফাইনালে বরিশাল। যদিও তিনবারই একই নামে ছিল না দলটি। তামিমের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো ফাইনালে গেল ফলচুন বরিশাল। গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বরিশালের জয়টা ৬ উইকেটের। নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচটিতে একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল শতরানও পার করতে পারবে না রংপুর। কিন্তু শামীম ঝড়ে দেড়শ লক্ষ্য দেয় রংপুর বরিশালের সামনে। এরপর শুরুতে বরিশাল বিপদে।
কিন্তু অভিজ্ঞ মুশফিকের কাঁধে চড়ে শেষ পর্যন্ত ফাইনালে বরিশাল। ২০১৭ সালে একবারই ফাইনালে গিয়েছিল রংপুর। আর সেবারই শিরোপা জিতেছিল। কিন্তু এরপর আর ফাইনালে যাওয়া হলো না দলটির। আরো একবার বিদায় নিতে হলো হতাশা নিয়ে। আগামীকাল ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং ফরচুন বরিশাল মোকাবেলা করবে। যেখানে কুমিল্লার লক্ষ্য হ্যাটট্রিক শিরোপা আর বরিশালের প্রথম।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা রংপুর রাইডার্সের শুরুটা হয়েছিল বিবর্ণ। প্রথম ওভার ঠিকঠাক খেললেও দ্বিতীয় ওভার থেকে শুরু হয় রংপুর ব্যাটারদের আসা–যাওয়ার মিছিল। ওপেনিংয়ে নামা মাহেদি হাসান সাইফউদ্দিনের প্রথম বলেই বিলিয়ে দেন উইকেট। একই ওভারের শেষ বলে বিদায় নেন সাকিব আল হাসানও। তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১ রান। ১০ রানে নেই দুই উইকেট। এক ওভার পর ফিরেন রনি তালুকদারও । ১২ বলে ৮ রান করে মেয়ার্সের বলে মিলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন রনি তালুকদার। আগের ম্যাচে একাই দলকে টেনে নেওয়া জিমি নিশাম কিছুক্ষণ লড়াই করেছেন। কিন্তু এবারে তিনি ব্যর্থ হলেন। ২৮ রানের বেশি করতে পারেননি। ফিরেছেন ফুলারের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ব্যর্থ হয়েছেন নিকোলাস পুরানও। ফিরেছেন ৩ রান করে। ৪৮ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন অধিনায়ক সোহান এবং আফগান তারকা মোহাম্মদ নবী। কিন্তু ভাগ্য ফেরেনি রংপুর রাইডার্সের। ২৪ রান যোগ করতে পেরেছেন দুজন। ১২ রান করে ফিরেন মোহাম্মদ নবি। অধিনায়কও পারলেন না বিপর্যয়ের মুখে দলের হাল ধরতে। ১৭ বলে ১৪ রান করে ফুলারের বলে বোল্ড হন রংপুর অধিনায়ক সোহান। ৭৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে শতরান পার করতে পারবে কিনা রংপুর সেটাই যখন গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল ঠিক তখনই ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন শামীম পাটোয়ারী। বলা যায় বরিশাল বোলারদের কচু কাটা করলেন এই তরুণ ব্যাটার। প্রথম দুয়েকটি বল দেখে শুনে খেললেও এরপর শামীম শুরু করেন ব্যাটিং তান্ডব। বরিশাল বোলার ম্যাককয় এর করা ১৯তম ওভারে নিয়েছেন শামীম তিনটি ছক্কাসহ ২৬ রান। ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। যার ফলে এবারের বিপিএলে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন এই ব্যাটার। তাকে সঙ্গ দিয়ে দলকে ভালো সংগ্রহ এনে দেন আবু হায়দার রনি। ৯ বলে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ২৪ বলে ৫ চার ও ৫ ছক্কায় ৫৯ রান করে অপরাজিত থাকেন শামিম। আর তাতে শতরান পার করতে শংকায় পড়ে যাওয়া রংপুর রাইডার্সের ইনিংস গিয়ে দাঁড়ায় ১৪৯ রানে। বরিশালের পক্ষে ৪ ওভারে ২৫ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন জেমস ফুলার। দুটি উইকেট নেন সাইফউদ্দিন।
লক্ষ্য ১৫০ রানের। সে লক্ষ্য তাড়া করতে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে ইনিংস সূচনা করতে নামেন তামিম ইকবাল। কিন্তু শুরুটা ঠিকমতো হলো না। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথম আঘাত হানেন আবু হায়দার রনি। ১০ রান করা তামিমকে ফেরালেন রনি মোহাম্মদ নবীর ক্যাচে পরিণত করে। একবল পর রনির দ্বিতীয় শিকার বরিশালের আরেক ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ। তকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফেরান রনি। রিভিও নিয়েও বাঁচতে পারেননি মিরাজ। ফিরেছেন ১৪ বলে ৮ রান করে। শুরুটা ধীরে সুস্থ করলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু খেলতে পারলেন না বড় ইনিংস। মুশফিকের সাথে ৪৭ রানের জুটি গড়ে ২২ রান করে স্টাম্পড হয়ে ফিরেন সৌম্য। এরপর মুশফিকের সাথে কাইল মেয়ার্স যোগ দিলে রানের গতি বাড়ে বরিশালের। দুজনে গড়েন ২৭ বলে ৫০ রানের জুটি। ফজল হক ফারুকী বিচ্ছিন্ন করেন দুজনকে।
১৫ বলে ২৮ রান করে ফিরেন মেয়ার্স। কিন্তু লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক। ডেভিড মিলারকে নিয়ে ৩৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ৯ বল হাতে রেখে দলকে ফাইনালে নিয়ে যান মুশফিক। ৩৮ বলে ৬টি চার এবং একটি ছক্কায় ৪৭ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। ১৮ বলে ২২ রান করে অপরাজিত ছিলেন ডেভিড মিলার। ২ উইকেট নেওয়া আবু হায়দার রনিই রংপুরের সেরা বোলার।