চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি এবং চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দাবি আদায়ে আমরা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলাম। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান সাহেব সম্মত হয়েছেন, উনারা বন্দর ব্যবহারকারী, ক্ষতিগ্রস্ত, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ১০–১৫ দিনের মধ্যে বৈঠকে বসবেন। প্রাথমিকভাবে আমরা সফল হয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুরোধ করবো সব অ্যাসোসিয়েশনকে বন্দরের ট্যারিফ কোন কোন খাতে বেশি হয়েছে তা আমাদের জানাবেন। আমরা চেষ্টা করবো সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত ট্যারিফ যাতে নির্ধারণ করতে পারি। আমরা চাই, বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত ট্যারিফ নির্ধারণ করা হোক।
গতকাল নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে সিটি কনভেনশন হলে চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক প্রসারে প্রতিবন্ধক ওজন স্কেল, বন্দর ট্যারিফ ও চট্টগ্রাম চেম্বারকে জবাবদিহিমূলক ও ব্যবসায়ীবান্ধব করার প্রত্যয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম মতবিনিময় সভাটির আয়োজন করেছে।
আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের প্রথম সভায় আলটিমেটাম দেওয়ার পরে বন্দরের চেয়ারম্যান স্বপ্রণোদিত হয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে চারটি খাতে ট্রাক, প্রাইমমুভার, ট্রেইলার, গেট ফি খাতে বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিতের ব্যবস্থা করেছিলেন। সিঅ্যান্ডএফ চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছিল, সে কারণে পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। আমরা চাইনি চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো ক্ষতি হোক। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা চিঠি দিয়েছি। উনি একটি পক্ষকে আমাদের সঙ্গে আলাপ করার জন্য নিযুক্ত করেছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করেছি।
প্রধান বক্তা ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের টিম লিডার মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন,আপনারা শুনে লজ্জিত হবেন, মহাসড়কে একটা স্কেলের জন্য চট্টগ্রাম থেকে মীরসরাই পাথর, কয়লা যায় না। মংলা বন্দর থেকে ট্রাকে মীরসরাইর ইকোনমিক জোনে কয়লা পাথর আসে। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ দুর্ভোগ আমাদের দিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম নগরীকে সুন্দর, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ফুটপাত থেকে হকারদের অন্য জায়গায় নিতে হবে। আর কোনো অপশন নেই। আমি জানি না এরা কোন দল করে। সবসময় তারা সরকারি দল করে। এখন তো অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের আমলেও তারা ফুটপাত দখল করে আছে। এর জন্য ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মার্কেটের সামনে, দোকানের সামনে ফুটপাতে কাউকে বসতে দেবেন না। নারী, শিশুরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন। ব্যবসায়ীদের যেকোনো আন্দোলনে দরকার হলে রাস্তায় বসে যাব আমি। আপনারা যদি সাথে থাকেন চট্টগ্রামকে হকারমুক্ত করা সম্ভব। প্যাকেজ ভ্যাট সবাই মিলে কথা বললে করা যাবে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের জায়গাটি সরওয়ার জামাল নিজাম সাহেব যখন চেম্বার সভাপতি ছিলেন তখন বেগম খালেদা জিয়া দিয়েছিলেন। বাকি জায়গাটুকু আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী যখন চেম্বার সভাপতি ছিলেন তখন ব্যবস্থা করেছিলেন। দুইজনকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। চিটাগাং চেম্বারের সদস্য ফি ৫ হাজার থেকে নামিয়ে আমি ২ হাজার টাকার নিচে আনার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথি বিজিএমইএর পরিচালক এম এ সালাম বলেন, চেম্বারের নির্বাচনে বিভিন্ন সেক্টর থেকে প্রতিনিধি নিয়ে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের প্যানেল দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে এ ফোরাম সোচ্চার ছিল। ২৪ জনের প্যানেল চিটাগাং চেম্বারকে মেরামত করবে। এ নির্বাচনে ৭ হাজার ৭০০ ভোটার। আগামী দুুই বছরের মধ্যে ২০–৩০ হাজার ভোটার করতে হবে। মেম্বার ফি ৫ হাজার থেকে কমিয়ে ২–১ হাজারে নামাতে হবে। এ সরকারের আমলে বিজিএমইএতে সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। আশাকরি চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনও সুন্দর হবে।
চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি সরওয়ার জামাল নিজাম বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার দেশের প্রিমিয়ার চেম্বার। দেশের অর্থনীতিতে চট্টগ্রামের অবদান ৪৭ শতাংশ। ১৯৯৫ সালে চেম্বার সভাপতি থাকাকালে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করি। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হলে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হবে। ১৫ দিনে জায়গা ঠিক করি। তখন নেত্রী দক্ষিণ কোরিয়া ছিলেন। কবলায় আমার সই আছে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বেগম খালেদা জিয়া করেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বারে যোগ্য সভাপতি নির্বাচিত হলে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন পরিচালক শাহেদ সরওয়ার বলেন, আলোচিত বিষয় বন্দর ট্যারিফ। এ টাকা কে পরিশোধ করবে। ফেরত কীভাবে আসবে। বন্দর ট্যারিফ ৪১ শতাংশ বেড়েছে প্রচার করলেও কোনো ক্ষেত্রে ৩০০ শতাংশও বেড়েছে। আগে ৩৭১ ডলার দিতাম, এখন ১৫০০ ডলার দিতে হচ্ছে। ব্যাপারটা অ্যালার্মিং।
বারভিডার সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর আমদানি রপ্তানির লাইফলাইন। সম্প্রতি বন্দরের সেবার ওপর যেভাবে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে তাতে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। চট্টগ্রাম চেম্বারে এক বছর ধরে প্রশাসক। সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য শক্তিশালী চেম্বার দরকার। আমার সংগঠনের ভোটারদের বলেছি ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামকে ভোট দেবেন।
সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, ট্যারিফ নিয়ে আন্দোলন মাত্র ১৫ দিনের মাথায় সিএন্ডএফের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ৪ ঘণ্টার কর্মবিরতির ওপর ৪টি খাতে ট্যারিফ স্থগিত করা হয়েছে। ৪১ শতাংশ ট্যারিফের বিষয়টি সঠিক নয়, আমরা শুনতে পাচ্ছি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি সংস্কার করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী অল্প দিনের মধ্যে ব্যবসায়ীদের উপদেষ্টার কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। এই নির্বাচনকে অর্থবহ করতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এসে ভোট দেওয়ার জন্য কাজ করবেন।
চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ছয় বছর ধরে সবার কাছে গেছি। কিন্তু আমাদের পাশে কাউকে পাইনি। তবে ইউনাইটেড প্যানেলকে পেয়েছি। ওজন স্কেল পরিমার্জন করতে তারা ইস্তেহার দিয়েছেন। তার জন্য তাদের ধন্যবাদ। ওনারা আমাদের যেই কথা দিয়েছেন, আশা করি এ প্যানেলের মাধ্যমে আমরা আমাদের কাজ উদ্ধার করতে পারব।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর আমরা চেম্বারে ভোট দিতে পারিনি। আমরা চাই এমন একটি চেম্বার যেখানে ব্যবসায়ীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকবে। আশা করি তাদের মাধ্যমে আমরা একটি সাফল্য পাব। আমরা ভ্যাট নিয়ে দীর্ঘ সময় হয়রানির শিকার হয়েছিলাম। ঘুষ দিতে হয়েছে। আজকে আমাদের একটি দাবি, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানিষ কর্ণফুলী সেতুতে টোল দিচ্ছে। আগে এই টোল বন্ধ করে দিতে হবে।
বিজেএমইএর প্রথম সহ–সভাপতি নাসিরুদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী চৌধুরী, বিজিএপিএমইএর সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, বিজিএপিএমইএর উপদেষ্টা খন্দকার লতিফুর রহমান আজিম, টায়ার টিউব ডিলার গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান, চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কনট্রাকটর অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি দোস্ত মোহাম্মদ, সেন্ট্রাল প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তুহিনুল আলম টিটু, ফিনলে স্কয়ার ব্যবসায়ী সমিতির মিয়া মো. খালেদ, ব্যবসায়ী নেতা এরফান উদ্দিন খোকন প্রমুখ।












