বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) আমদানিকৃত জ্বালানি তেল পরিবহন নিয়ে প্রচলিত আইন লঙ্ঘনকারী বিদেশী জাহাজকে অবশেষে ওয়েবার সনদ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ থাকলেও প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে জাহাজটিতে ৩৫ হাজার টন জ্বালানি তেল সিংগাপুর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসা হয়েছিল। ঘটনা জানাজানি হলে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) আবেদনের প্রেক্ষিতে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর বিদেশী জাহাজটির তেল খালাস আটকে দেয়। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়সহ শীর্ষ পর্যায়ের আলাপ আলোচনার পর শুষ্ক মৌসুমে জ্বালানি তেলের প্রয়োজনীয়তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জাহাজটির ওয়েবার সনদ ইস্যু এবং তেল খালাসের অনুমোদন দেয়া হয়। সূত্র জানিয়েছে, বিপিসির আমদানিকৃত ৩৫ হাজার টন জ্বালানি তেল সিংগাপুর থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়। ওই সময় বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ উক্ত চালানটি পরিবহনে প্রস্তুত থাকলেও বিদেশী পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমটি গ্রান্ড আইস-১২’ এ বোঝাই করে উক্ত ৩৫ হাজার টন ডিজেল চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। বন্দরে কিংবা ধারে কাছে দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ থাকলে দেশের জন্য আমদানিকৃত পণ্য ওই দেশীয় জাহাজে পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) আইন অনুযায়ী এর ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট বন্দরে বা ধারে কাছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী কোন জাহাজ না থাকলে সেক্ষেত্রে পণ্য বোঝাইয়ের ১৫দিন আগে ওয়েবার সনদ নিয়েই কেবল ওসব পণ্য জাহাজে বোঝাই করে দেশে আনা যাবে। দেশীয় জাহাজকে সুরক্ষা দিতে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল।
সম্প্রতি বিপিসির জন্য আমদানিকৃত ৩৫ হাজার টন ডিজেল প্রচলিত আইন না মেনেই চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসা হয়। ওই সময় দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ সিংগাপুরে অবস্থান করলেও বিদেশী পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমটি গ্রান্ড আইস-১২’ জাহাজ বোঝাই করে ডিজেলের চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসা হয়। গত ২৮ জানুয়ারি জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। পণ্য বোঝাইয়ের ১৫দিন আগে ওয়েবার সনদ নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও জাহাজটির ক্ষেত্রে ওই আইন মানা হয়নি।
জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পোঁছার পর বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন বিষয়টি নৌবাণিজ্য অধিদপ্তরকে জানায়। নৌবাণিজ্য অধিদপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট মেরিনার্স ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম কোম্পানি লিমিটেডকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয় এবং জ্বালানি তেল খালাস বন্ধ করে দেয়।
পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়সহ শীর্ষ পর্যায়ে আলাপ আলোচনা করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে ডিজেলের মতো জরুরি জ্বালানি তেল খালাস বন্ধ করে রাখা হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হওয়ার আশংকা করা হয়। সার্বিক বিবেচনা করে অবশেষে নৌ বানিজ্য অধিদপ্তর থেকে এমভি গ্রান্ড আইস-১২ জাহাজটিকে ওয়েবার সনদ প্রদান এবং জ্বালানি তেল খালাসের অনুমোদন দেয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেন, বিএসসির জাহাজকে বাদ দিয়ে বিদেশি জাহাজে সরকারি জ্বালানি তেল পরিবহনের বিষয়টি দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থি। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় এক্ষেত্রে বড় ধরনের কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।