সম্পদ বৃদ্ধিতে এমপিদের ছাড়িয়ে গেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা

উপজেলা নির্বাচনে জনস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব দেখছে না টিআইবি

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ১০ জুন, ২০২৪ at ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ

গত ৫ বছরের মধ্যে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা সংসদ সদস্যদেরও পেছনে ফেলেছেন। এ সময়ের মধ্যে একজন সংসদ সদস্যের অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ, সেখানে একজন চেয়ারম্যানের বেড়েছে ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ। গতকাল রোববার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে দুর্নীতি বিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হলফনামা বিশ্লেষণ ও চূড়ান্ত ফলাফল’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া উপজেলা নির্বাচনে জনস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব দেখছে না টিআইবি। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।

টিআইবির তথ্য অনুযায়ী, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদে একজন বিজয়ীর ৫ বছরে আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৮৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অস্থাবর সম্পদ সর্বোচ্চ বেড়েছে ২৩ হাজার ৯৩৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। প্রায় ৮৪ শতাংশ প্রার্থীর হলফনামার সঙ্গে আয়কর রিটার্নের সম্পদের হিসেবের পার্থক্য দেখা যায়। নারী ও পুরুষ প্রার্থীদের প্রায় প্রত্যেক নির্দেশকে উল্লেখযোগ্য বৈষম্য দেখা যায়; প্রায় সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিলেন নারী প্রার্থীরা।

গত ৫ বছরে ১ কোটি টাকার উপরে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৫১ জন। ১০ বছরে এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৪১ জন। দেশের মধ্যাঞ্চল, কুমিল্লাফেনী অঞ্চল ও খুলনা অঞ্চলে প্রার্থীদের গড় আয় ও অস্থাবর সম্পদ বেশি। বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লা অঞ্চলে প্রার্থীদের গড় অস্থাবর সম্পদ ৫ বছরে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গাজীপুর, ময়মনসিংহ অঞ্চলে।

টিআইবির তথ্য অনুযায়ী, ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে তিন পদে মোট প্রার্থী ছিলেন ৫ হাজার ৪৭২ জন। চেয়ারম্যান পদে ১ হাজার ৮৬৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ হাজার ৯৫ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করেছেন ১ হাজার ৫১৩ জন।

আইন অনুযায়ী, দলীয় প্রতীকে ভোটের বিধান থাকলেও নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলগতভাবে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী।

উপজেলা নির্বাচনে জনস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব নেই : ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে ক্ষমতাসীন দল নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। নির্বাচন নিয়ে টিআইবির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অনেক সময় যেটা প্রকাশিত হয়েছে ক্ষমতার অন্তর্দ্বন্দ্বদ্ব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এটা ইঙ্গিত দিচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর উপলব্ধি করার সময় এসেছে, জনপ্রতিনিধিত্ব জনস্বার্থকে কেন্দ্র করে যেটা হওয়ার কথা, সেটা বাস্তবে নেই। এটা ক্ষমতাকেন্দ্রিক জনপ্রতিনিধিত্ব।

চার ধাপে গত ৯ মে, ২১ মে, ২৯ মে ও ৫ জুন সাড়ে ৪০০ এরও বেশি উপজেলার ভোট শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে স্থগিত হওয়া ১৯ উপজেলার নির্বাচনও শেষ হয়েছে রোববার।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচিতদের অন্তত ১২ শতাংশ কোটিপতি রয়েছে। এবারের ভোটে জয়ীদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের সদস্য। চেয়ারম্যান পদে নারী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২ শতাংশের কম। রাজনৈতিক অঙ্গনে সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের কথা বলা হয়েছে। এ জায়গায় আমাদের ঘাটতি রয়েছে।

নির্বাচনে একই দলের প্রাধান্য প্রতিফলিত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে দলীয় যে একচ্ছত্র প্রাধান্য হয়েছে, একই দলের প্রাধান্য তারই প্রতিফলন হয়েছে উপজেলা নির্বাচনে। যদিও দলীয়ভাবে নির্বাচন হয়নি; কিন্তু সিংহভাগ বা ৯০ শতাংশের বেশি সরকারদলীয় সদস্য, নেতারাই জিতেছেন।

উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিরও বিভ্রান্তিমূলক অবস্থান ছিল মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দলীয়ভাবে বর্জনের ঘোষণা দিলেও তাদের অনেকে অংশ নিয়েছেন। তাদের ফলাফল উল্লেখযোগ্য কিছু নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন মোদি
পরবর্তী নিবন্ধখালে মিলল শিশুর লাশ