প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ চট্টগ্রাম আসছেন। ১০ বছর ৯ মাস পর নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিচ্ছেন তিনি। এর আগে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিশাল জনসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। অবশ্য বছর চারেক আগে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ তিনি পটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) সেনাবাহিনীর পাসিং আউট অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ওখান থেকে তিনি সড়কপথে নগরীতে আসবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের রুট গোপন রাখা হয়েছে। নগরীর সার্কিট হাউজে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তিনি পলোগ্রাউন্ড মাঠে জনসমাবেশে যোগ দেবেন। সমাবেশ শেষ করে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফিরে যাবেন। অবশ্য ফিরতি পথে তিনি বিমান ব্যবহার করবেন নাকি সেনানিবাস থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকা ফিরবেন নিরাপত্তার স্বার্থে তা-ও গোপন রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমনকে ঘিরে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতাকর্মীদের তৎপরতা নগরজুড়ে তৈরি করেছে ভিন্ন আবহ। ব্যানারে, পোস্টারে, মাইকে বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। এর আগে স্মরণকালে আর কখনো শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে এত উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়নি। এত ব্যানার-পোস্টারের আধিক্যও দেখা যায়নি।
পলোগ্রাউন্ড মাঠে নৌকা আকৃতির ৩ হাজার ৫২০ বর্গফুটের দৃষ্টিনন্দন একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এই মঞ্চে একসাথে দুই শতাধিক নেতার বসার ব্যবস্থা থাকবে। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কারা বসবেন তা চূড়ান্ত করেছে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এসএসএফ এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
জনসভাকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য জনসভার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। এর মধ্যে নগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, জনসভা মঞ্চ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া পলোগ্রাউন্ডের চারপাশে ও ভেতরে টহল দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তার পুরো বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)।
এদিকে জনসভার স্থান থেকে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রচারে পলোগ্রাউন্ড ও আশেপাশের এলাকায় লাগানোর জন্য ঢাকা থেকে এসেছে মাইক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কলরেডির ১৫০টি মাইক। আশেপাশের দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনা যাবে। মঞ্চের মাঝখানে ৮০ ফুটের এলইডি লাগানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ দেখার জন্য ভেতরে-বাইরে সাত স্থানে বড় এলইডি লাগানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ ৩০টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আসার কথা। তবে নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভোর থেকে লোকসমাগম শুরু হবে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রেলওয়ে স্টেশন, সিআরবি, টাইগারপাশ, দেওয়ানহাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হওয়ার পর শোভাযাত্রা সহকারে সমাবেশস্থলে যাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছেন বিভিন্ন সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যরা। সন্ধ্যার আগে সমাবেশ শেষ করার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী যেসব এলাকা দিয়ে জনসভাস্থলে পৌঁছবেন এবং জনসভা শেষ করে ফিরে যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে সেসব এলাকাকে নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে। রাস্তাগুলোতে পিচ ঢালাই করা হয়েছে। ভরাট করা হয়েছে খানাখন্দ। সড়কের দুই পাশে ফুটপাত ও ডিভাইডারেও কাজ করা হয়েছে। সড়কের পাশে শোভা পাচ্ছে শত শত ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, দেয়াললিখন, আলোকসজ্জা ও তোরণ। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।