শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস এর দুষ্ট প্রভাবে গত বছরের মার্চ মাসের ১৭ তারিখ থেকে দেশের স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে সেই মেরুদণ্ডে চিড় ধরতে শুরু করেছে। ভাইরাসের প্রকোপে একটা সময় পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে অবনতি হওয়ায় চিকিৎসা খাত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জরুরীসেবা কেন্দ্র খোলা রেখে অনেকদিন পর্যন্ত দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি একটু সহনীয় পর্যায়ে এলে একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু খুলে দেয়া হয়।
ব্যবসা বাণিজ্য, অফিস আদালত খুলে দেয়া হয়। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেয়া হয়। বিভিন্ন মাঠে ও স্টেডিয়ামে খেলাধুলা চলছে। রাজনৈতিক মিছিল, সভা, সমাবেশ চলছে প্রতিনিয়ত। ব্যাংক চলছে। পোশাকখাত খোলা, বিভিন্ন কলকারখানা খোলা। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান চলছে। গাড়ি চলছে। বাজারগুলো সরগরম। যেখানে শারীরিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। সবকিছুই চলছে চলছে আর চলছে। কোনো কিছুই বন্ধ নেই শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া!! প্রায় ১০ মাস হতে চললো। করোনাভাইরাস এর কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকার বাধ্য হয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিনা পরীক্ষায় অটো পাস দিতে বাধ্য হয়েছে। প্রাইমারি ও হাই স্কুলে অটো পাস দিয়ে দেয়া হয়েছে। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষাও অনিশ্চিত হয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট পর্যায়ের বেসরকারি স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন স্কুল ভবনের ভাড়া ও শিক্ষক এবং স্টাফদের বেতন দিতে হিমসিম খেয়ে পড়ছে। কোনো কোনো স্কুলের শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। মোট কথা শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি এসে পড়েছে। তাই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের নিকট কয়েকটি প্রস্তাবনা পেশ করছি।
১) অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। ২) বিভিন্ন অনুন্নত স্কুলগুলোকে সরকারি অনুদান দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) বিশেষ করে প্রাইমারি ও হাই স্কুলগুলোতে শনিবার সোমবার বুধবার রোল ১,৩,৫,৭,৯,১১ এমন করে ক্লাসে মোট শিক্ষার্থীদের শেষ বেজোড় সংখা রোলধারীদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস নেয়া হবে। এবং রবি মঙ্গল বৃহস্পতিবার ২ ৪ ৬ ৮ ১০ এমন করে জোড় সংখ্যার রোল নং ধারীদের ক্লাস নেয়া যেতে পারে। যে শিক্ষক বিজোড় সংখ্যাধারীদের আজ যে বিষয় এবং অধ্যায় নিয়ে ক্লাস করাবেন ঠিক ও বিষয় ও অধ্যায় নিয়ে পরদিন জোড় সংখ্যাধারীদের ক্লাস করাবেন।
৪) প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট হলেও মহামারীর শেষ আপডেট নিউজ ও ভাইরাস নিয়ে পরিস্থিতি আলোচনা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করা যেতে পারে। ৫) শিক্ষকদের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৬) স্কুল প্রাঙ্গণকে করোনাভাইরাস মুক্ত রাখতে হ্যাণ্ড সেনিটাইজার সহ বিভিন্ন সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৭) মোট কথা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষা ব্যবস্থা চরম হুমকির মুখে পতিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ৮) বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের টিম গঠন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করার নতুন আর কেনো পদ্ধতি বা উপায় খুঁজে নেয়ার জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এভাবেই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বন্ধ্যাত্বতা থেকে মুক্তি দেয়ার উপায় খুঁজে নেয়া যেতে পারে।