শপথ নিলেন চট্টগ্রামের তিনজনসহ সংরক্ষিত নারী আসনের এমপিরা

হতে পারে মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ, চট্টগ্রাম থেকে আলোচনায় তিনজন

শুকলাল দাশ | বৃহস্পতিবার , ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের ৫০ সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করেছেন। সংরক্ষিত নারী আসনে এবার চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তিনজন। গতকাল বুধবার সংসদ সদস্য হিসেবে সংরক্ষিত আসনের তিনজন শপথ গ্রহণের পরপরই বিকেলে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। এবার চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত আসনে নবনির্বাচিত তিন সংসদ সদস্য হচ্ছেনআওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিলোয়ারা ইউসুফ ও দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা। ওয়াসিকা আয়শা খান এবারসহ পরপর তিনবার সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবার সংরক্ষিত নারী আসন থেকে তাঁর মন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই।

গতকাল বুধবার বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের শপথগ্রহণ কক্ষে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, চিফ হুইপ নুর ই আলম চৌধুরী, হুইপ আবু সাঈদ স্বপন, ইকবালুর রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রথমে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত ৪৮ জন সংসদ সদস্যকে স্পিকার শপথবাক্য পাঠ করান। এরপর জাতীয় পার্টির ২ জন শপথ নেন। শপথের পরে সংরক্ষিত সদস্যরা রীতি অনুযায়ী শপথ বইয়ে সই করেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালাম।

এদিকে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা সমপ্রসারণ হচ্ছে এমন আলোচনা এবং গুঞ্জন গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই চলছে। গতকাল সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণের পর পরই নতুন মন্ত্রিসভার সমপ্রসারণ হতে পারে এমন আলোচনা চলছে। মন্ত্রিসভার নতুন সদস্য হিসেবে সংরক্ষিত আসনের দুইএকজন স্থান পাচ্ছেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত। এর বাইরে টেকনোক্র্যাট কোটায় কাউকে কাউকে যুক্ত করা হতে পারে এমন জোর গুঞ্জনও রয়েছে দলটির শীর্ষ নেতাদের ঘরোয়া আলোচনায়।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তাদের অনেকেই মনে করেন, বর্তমান মন্ত্রীপ্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে আরও সাতআটজন নতুন মুখ যুক্ত হতে পারেন। এ যাত্রায় পূর্ণ মন্ত্রীর চেয়ে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বেশি হতে পারেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তিনচারজন মন্ত্রিসভায় আসতে পারেন, এমন আলোচনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও সরকারের সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। কবে নাগাদ মন্ত্রিসভা সমপ্রসারিত হবে, এর সুনির্দিষ্ট তারিখ কেউ বলতে পারছেন না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ নেতা আজাদীকে জানিয়েছেন, খুব শিগগির মন্ত্রিসভার এই সমপ্রসারণ হতে পারে। এই বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ১১ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়। এরপর থেকেই আলোচনা আছে যে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা পুনরায় সমপ্রসারিত হবে।

বর্তমান মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী রয়েছেন ২৫ জন এবং প্রতিমন্ত্রী ১১ জন। ৩৭ সদস্যের এই মন্ত্রিসভায় কোনো উপমন্ত্রী নেই। একাদশ সংসদের মন্ত্রিসভায়ও পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন ২৫২৬ জনে মতো। তবে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ২০ জনের মতো। এ ছাড়া তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন। সব মিলিয়ে আগের মন্ত্রিসভা ছিল ৪৯ সদস্যের। বর্তমান মন্ত্রিসভায় আগের চেয়ে ১২ জন মন্ত্রীপ্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীর সংখ্যা কম রয়েছেন।

এদিকে মন্ত্রিসভার সমপ্রসারণের খবরে বঞ্চিত বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন মন্ত্রী দেওয়ারও দাবি উঠেছে। চলমান মন্ত্রিসভায় এবার চট্টগ্রাম মহানগর ও উত্তর জেলা থেকে দুইজন পূর্ণমন্ত্রী পেলেও বঞ্চিত হয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা। গতবার দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী একজন মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যদার হুইপ পেয়েছিলেন।

সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের গতকাল শপথ গ্রহণের পর দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে তিনবারের সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। পরপর তিনবার সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য হওয়ার নজির খুব কম।

প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টিতে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান একাদশ জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। সবদিক বিবেচনা করে এবার তাকে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করতে পারেন বলে এমনটা মনে করছেন অনেকে।

এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে নতুন সংসদ সদস্য হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেলকেও মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে স্থান পেতে পারেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে। এর বাইরে আলোচনায় আছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিন বছরের চুক্তিতে ছিলেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি চুক্তি বাতিল করে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনার পর থেকে অনেকেই মনে করছেন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে টেকনোক্র্যাট কোটায়।

আলোচনায় যেসব মন্ত্রণালয় :

সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, বিগত মন্ত্রিসভার সমান বা এর কাছাকাছি সংখ্যায় নিয়ে যাওয়া হবে বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা। কারণ, এখনো দুটি মন্ত্রণালয়ে কোনো মন্ত্রীপ্রতিমন্ত্রী দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীপ্রতিমন্ত্রী কেউ নেই। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও প্রতিমন্ত্রী নেই।

অনেকেই মনে করছেন, সমপ্রসারণ হলে ফাঁকা থাকা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি এই মন্ত্রণালয়গুলোতেও নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে মন্ত্রী থাকলেও নতুন মন্ত্রিসভায় সেটা এখনও ফাঁকা রাখা হয়েছে। এজন্য অনেকেই মনে করছেন, এখানেও নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক একাই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে একজন প্রতিমন্ত্রী কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। এই মন্ত্রণালয়ে চট্টগ্রামের একজন সংসদ সদস্যের কথা শোনা যাচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় অথবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে চট্টগ্রাম থেকে একজন নারী সংসদ সদস্যকে দেখা যেতে পারে বলে নানা সূত্রে জানা গেছে।

বর্তমান মন্ত্রিসভায় দেখা গেছে, বড় বড় বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ে একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ এসব মন্ত্রণালয়ে অতীতে একাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রী ছিলেন। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী ছাড়াও প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী দেওয়া হয়েছে। এবার এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে এককভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাজুল ইসলাম। এই মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রী দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও একজন প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, নারী নেত্রীদের সুযোগ করে দিতে মন্ত্রিসভা সমপ্রসারণের বিষয়টি নিয়ে এতদিন কালক্ষেপণ করা হয়েছে। সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিতদের শপথগ্রহণের পর সেটা ত্বরান্বিত হবে। গতকাল সেটা সম্পন্ন হয়েছে। সুতরাং যে কোনো সময় নতুন মন্ত্রী সম্প্রসারণ হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকী নেই নগরের খাল নালায়
পরবর্তী নিবন্ধআমরা চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করবো : পররাষ্ট্রমন্ত্রী