লোহাগাড়ায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক নতুন জাত বিনা ধান–২৫ এর আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার চুনতি ও পদুয়া ইউনিয়নে ৪টি স্থানে চিকন জাতের এ ধান পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করা হয়। প্রথমবার আবাদে সাফল্য পাওয়া এ জাত উচ্চ ফলনশীল হলেও এটি হাইব্রিড ধান নয়। জানা যায়, আট বছরের গবেষণায় ধানের এই নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)। জাতটি অতি লম্বা, সরু, উচ্চফলনশীল ও আলোক অসংবেদনশীল। বিনা ধান–২৫ জাতের চাষাবাদের ফলে বিদেশ থেকে চিকন চাল আমদানি নির্ভরতা কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার এ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ এ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহযোগিতায় চলতি মৌসুমে লোহাগাড়ায় প্রথমবারের মতো ক্লাস্টার প্রযুক্তি প্রদর্শনী (বোরো) বিনা ধান–২৫ আবাদ করা হয়েছে। পদুয়া ইউনিয়নে দুই স্থানে ও চুনতি ইউনিয়নে দুই স্থানে এই জাতের ধানের প্রদর্শনী করা হয়েছে। প্রতিটি প্রদর্শনীতে ৩ জন কৃষককে ২ একর জমির জন্য ২০ কেজি করে মাদার সিড প্রণোদনা দেয়া হয়। এবার প্রতি কানি জমি থেকে ১৪০–১৫০ আড়ি ধান পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে কৃষকেরা সংরক্ষণ করবেন এবং আগামী মৌসুমে তা ব্যাপক আকারে চাষবাদ করবেন। পরীক্ষামূলক আবাদে এবার সুবিধাভোগী কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে এই ধানের বীজ সরবরাহ করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই জাতটি উচ্চ ফলনশীল। কৃষক বিনা ধান–২৫ আবাদে কৃষক লাভবান হবে। এই ধানের জীবনকাল ১৩৮ থেকে ১৪৮ দিন, গাছ লম্বা কিন্তু শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে কম। প্রতি গাছে ১০ থেকে ১২টি কুশি থাকে। ছড়ার দৈর্ঘ্য গড়ে ২৭০ সেন্টিমিটার লম্বা। প্রতি শীষে পুষ্ট দানার পরিমাণ ১৫০ থেকে ১৫৫টি। হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ১৯৭ গ্রাম। ভাত সাদা, ঝরঝরে ও সুস্বাদু। ফলে বাজারমূল্য বেশি ও রপ্তানি উপযোগী। এই ধানের চাল রান্না করলে চালের আকৃতি দ্বিগুণ আকার ধারণ করে। যা অনেকটাই বাসমতির মতো, খেতেও সুস্বাদু। বিনা ধান–২৫ আবাদে কৃষকরা দুই ফসলি জমিতে তিনবার ফসল করতে পারবেন।
গত শুক্রবার চুনতি ইউনিয়নের সিকদার পাড়ায় বিনা ধান–২৫ জাতের প্রদর্শনীতে সরেজমিনে দেখা যায়, বাতাসে ধুলছে ধানের শীষ। সবগুলো ধান গাছ সোজা সারি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক সপ্তাহ পরে ধান কাটার উপযোগী হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আশানুরূপ ধান পাওয়া যাবে। ধানের ফলন দেখে কৃষকের মুখে আনন্দের হাসি দেখা গেছে। চুনতির কৃষক কাইছার খান ছিদ্দিকী জানান, আমরা কৃষি প্রণোদনা পেয়ে দুই একর জমিতে এই ধানের আবাদ করেছি। এই ধানে রোগবালাই নেই। সেচ ও সার কম লেগেছে। ধান অতি লম্বা ও সবেচেয়ে সরু। আগামী বছরের জন্য এই ধানের বীজ সংরক্ষণ করব। আমাদের ক্ষেতে ধানের সমারোহ দেখে অনেক চাষি এই ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
আগ্রহী কৃষক সাহাব উদ্দিন, জালাল উদ্দিন ও আবুল হাশেম জানান, এই ধানের নতুন জাত সম্পর্কে আমরা আগে জানতাম না। প্রতিবেশী কৃষকরা আবাদের পর জানতে পেরেছি। যতটুকু জানলাম ও দেখলাম এই জাতের ধান ফলন বেশি। একদম চিকন, খেতেও ভালো। তাই আগামী বোরো মৌসুমে আমরাও বিনা–২৫ জাতের ধান আবাদ করব।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারওয়ার আলম জানান, জাতটি আমাদের দেশে বাসমতী চালের বিকল্প পণ্য হতে পারে। এর ফলন বেশি। রোগব্যাধি কম হওয়ায় বীজ সংরক্ষণ করার সুবিধা রয়েছে। কৃষিকে বহুমুখীকরণ ও কৃষকদের ভালো লাভের মাধ্যমে কৃষিকাজে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এই জাত আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিউল ইসলাম জানান, আমদানি নির্ভরতা কমাতে এই ধান বড় ভূমিকা পালন করবে। স্বল্প মেয়াদী এই ধান প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এবং সুগন্ধি, সহজেই হেলে পড়ে না। জমিতে পানি জমে গেলে, ঝড়–বৃষ্টির কবলে ধান গাছ হেলে পড়লেও পানি সরে যাওয়ার পর রৌদ্রোজ্জ্বল অবস্থায় দুই–তিন দিনের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে ও স্বাভাবিক ফলন দেয়। এজন্য কৃষকদের কাছে সমাদৃত হবে। রপ্তানিযোগ্য এই ধান আবাদ করলে কৃষকরা দ্বিগুণ লাভবান হবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।