‘লোভনীয়’ প্রস্তাব, গ্রহণ করতে পারছে না চসিক

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ।। ৩১ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের অনুদান ও ঋণ সহায়তার প্রস্তাব দক্ষিণ কোরিয়ার ।। বছর পেরুলেও অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়

মোরশেদ তালুকদার | সোমবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ

এক বছর আগে নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ৩১ কোটি ৩৬ লাখ (৩১৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার (চসিক) অনুদান এবং ঋণ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন কোরিয়া এনভারনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের (কেইআইটিআই) মাধ্যমে দুই ধাপে এ সহায়তা করার কথা। বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানায় চসিক। তবে বছর পেরুলেও এখনো অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়। তাই ‘লোভনীয়’ প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে পারছে না চসিক।

অবশ্য এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানটি তাদের অনুদান এবং ঋণ সহায়তা প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কী কী করা হবে তা নিয়ে ‘প্রিফিজিবিলিটি স্টাডি’ সম্পন্ন করে। স্টাডির রিপোর্টটি আজ সোমবার আনুষ্ঠানিকভবে উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। অবশ্য গত মাসের শেষ সপ্তাহে অনানুষ্ঠানিকভাবে তা চসিককে জানিয়েছিল কেইআইটিআই। একইসঙ্গে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার অনুমতি চায় চসিকের কাছে। এর প্রেক্ষিতে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার জন্য কেইআইটিআইকে অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পত্র দিয়েছিল চসিক। তবে মন্ত্রণালয় এতেও নীরবতা পালন করছে। মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা দেয়ার বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, এখনো অনুমোদন পাইনি। নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আমরা নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহর করতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের একজন। ওই সময় চসিককে একটি প্রজেক্ট কনসেপ্ট প্রপোজলের (পিসিপি) ড্রাফট হস্তান্তর করে। অনুদান প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকাস্থ কোরিয়ান দূতাবাসে প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেয়ার শর্ত ছিল। যা একই বছরের ২৫ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে জানায় চসিক।

চসিক জানা গেছে, কেইআইটিআই দুই ধাপে প্রকল্প সহায়তা করতে চায়। তাদের প্রস্তাবিত ৩১৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হচ্ছে অনুদান। বাকি ৩০০ মার্কিন মিলিয়ন ডলার হচ্ছে ঋণ। জাতিসংঘ জলাবায়ু সম্মেলন২৭ এর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এটা গ্রিন ফান্ড হিসেবে এ ঋণ দেয়া হবে। এ ঋণ পরিশোধে চসিক সময় পাবে ৪০ বছর। গ্রেস পিরিয়ড থাকবে ১৫ বছর। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ১৫ বছর পর থেকে ঋণ শোধ করতে হবে। সুদের পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের এক কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তাছাড়া ঋণ পরিশোধের এত দীর্ঘ সময় খুব কম পাওয়া যায়। এত দীর্ঘ সময় দেয়ার কারণে একটা সময় এসে ঋণ মওকুফ করে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এটা লোভনীয় প্রস্তাব।

জানা গেছে, কেইআইটিআইয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, অনুদান প্রকল্পের আওতায় এমআরএফ (ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি) সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। এ সুবিধার মাধ্যমে সংগৃহীত প্লাস্টিক, পিচবোর্ড, কাগজ (সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, অফিসের কাগজ, মিশ্র কাগজ), কাচের বোতল, জার, অ্যালুমিনিয়াম এবং স্টিলের ক্যানসহ ধাতব পাত্র মেশিনের মাধ্যমে পৃথক করা হবে। এরপর সেগুলো ম্যাটেরিয়াল রিকভারি কারখানায় কম্প্যাক্ট করে প্রয়োজন অনুসারে কাজে লাগানো হবে।

অনুদান প্রকল্পের আওতায় ছোট আকৃতির বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করা হবে। জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা এবং পরিচ্ছন্নকর্মীদের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, সচেতনভাবে বর্জ্য সংগ্রহ করা, ডোর টু ডোর সংগ্রহের জন্য আধুনিক উপকরণ সরবরাহ করা হবে।

ঋণ সহায়তায় প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে আরেফিন নগরে স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের উন্নয়ন প্রকল্প, একটি আবর্জনাগার বন্ধ করা, ফিকেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ফুড ওয়েস্ট প্ল্যান্ট, এমআরএফ প্ল্যান্ট এবং বড় আকারের বায়ো গ্যাস প্ল্যান্ট করা হবে। আরেফিন নগর ল্যান্ডফিলটি আরো সম্প্রসারণ করে পুরোটা স্যানিটারি ল্যান্ডফিল করা হবে। সেখানে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। বর্জ্য থেকে বিষাক্ত যে পানি বের হয় সেটা ভূগর্ভে চলে গেলে ভূগর্ভস্থ পানিকেও দূষিত করে। এ দূষণ রোধ করার জন্য ট্রিটমেন্ট করা হবে।

এছাড়া ঋণ সহায়তা প্রকল্পের আওতায় বর্জ্য পরিবহনে কম্প্যাক্টর (বিশেষ যান) সরবরাহ করবে। সংগ্রহ পদ্ধতিও উন্নত করা হবে। এছাড়া ফুড ওয়েস্ট প্ল্যান্টে পরিচ্ছন্নকর্মীদের সংগৃহীত সবজি (উচ্ছিষ্ট) এবং খাদ্য বর্জ্যকে দুইভাবে কাজে লাগানো হবে। এর মধ্যে একটি অংশ দিয়ে সার এবং অপর অংশ দিয়ে তৈরি করা হবে বায়ো গ্যাস।

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী আজাদীকে বলেন, আমাদের দুইটি আবর্জনাগার রয়েছে। এর মধ্যে হালিশহরেরটি ব্লক হয়ে আছে। দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ল্যান্ডফিল উন্নয়নে প্রস্তাব দেয়। কাল (আজ) প্রেজেন্টেশন দিবে তারা।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরে দৈনিক তিন হাজার টনের বেশি বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে দুই হাজার টন বর্জ্য সংগ্রহ করে চসিক। সংগৃহীত এসব বর্জ্য ফেলা হয় চসিকের বায়েজিদ ও হালিশহরের পৃথক দুটি ল্যান্ডফিলে (বর্জাগার)। তবে এ দুটো ল্যান্ডফিল ধীরে ধীরে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনৌকায় জয়ীরা আমার ডান হাত, স্বতন্ত্ররা বাম হাত : শেখ হাসিনা
পরবর্তী নিবন্ধচকবাজারে হাজী বিরিয়ানি হাউজ সিলগালা, লাখ টাকা জরিমানা