লেজার রশ্মির সাহায্যে সরানো হলো বজ্রপাত

| বুধবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

শক্তিশালী লেজার রশ্মি নিক্ষেপ করে আকাশে তৈরি ভার্চুয়াল বৈদ্যুতিক রড বজ্রপাতের পথ বদলে দিতে পারে। এই প্রথমবার এমন পরীক্ষা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সোমবার ব্রিটিশ জার্নাল নেচার ফটোনিকস প্রকাশিত গবেষণায় উঠে আসে, বিভিন্ন পাওয়ার স্টেশন, বিমানবন্দর ও লঞ্চপ্যাডের মতো স্পর্শকাতর অবকাঠামোর বৈদ্যুতিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। খবর বিডিনিউজের।

ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয় ইকোল পলিটেকনিকসহ অন্যান্য বিজ্ঞানীর বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বজ্র সুরক্ষা যন্ত্রের নাম ‘ফ্র্যাঙ্কলিন রড’। এটি বিল্ডিং ও অন্যান্য অবকাঠামোর ওপর থাকা বিদ্যুৎ পরিবাহী ধাতব এক খুঁটি, যা বজ্রপাতে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক চার্জ নিরাপদে মাটিতে নামিয়ে আনতে সহায়তা করে।

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, শক্তিশালী লেজার রশ্মি আকাশের দিকে তাক করলে এটি একটি ভার্চুয়াল চলমান রড হিসেবে কাজ করে, যা বিকল্প এক ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এর আগের ল্যাব পরীক্ষাগুলোতে এমন নজির মিললেও গবেষকরা বলছেন, শক্তিশালী লেজার রশ্মির মাধ্যমে বজ্রপাতের গতিবিধি বদলানোর উদ্দেশ্যে এর আগে কখনও মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা চালানো হয়নি।

২০২১ সালের গ্রীষ্মে উত্তরপূর্ব সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত ‘সান্তিস’ নামের পর্বত থেকে এই পরীক্ষা চালিয়েছেন ইকোল পলিটেকনিকের গবেষক অরিলেই হউয়ার্ডসহ অন্য বিজ্ঞানীরা। এই পরীক্ষা চালাতে তারা লেজার লাইটনিং রড (এলএলআর) নামের লেজার ডিভাইস ব্যবহার করেছেন একটি টেলিযোগাযোগ টাওয়ারের কাছে, যেটিতে বছরে প্রায় একশবার বজ্রপাত ঘটে। আকারে একটি বড় গাড়ির সমান এই সেটআপ প্রতি সেকেন্ডে এক হাজার বার পর্যন্ত লেজার নিক্ষেপ করে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ডিভাইস বিভিন্ন চার্জযুক্ত কণার সঙ্গে আয়নযুক্ত বাতাসের পরিবহন ব্যবস্থা তৈরি করে, যা বজ্রপাতের গতিবিধি নির্দেশনায় ব্যবহৃত হতে পারে।

প্রচলিত বৈদ্যুতিক রডের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া এই ডিভাইস সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি ভার্চুয়াল উপায়ে নিজের ও সুরক্ষা দেওয়া এলাকার উচ্চতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

গবেষণাপত্রের সহলেখক জাঁপিয়ের উলফ বলেন, বায়ুমণ্ডলে তুলনামূলক উচ্চ ক্ষমতার লেজার পালস নির্গমনের সময় রশ্মির ভেতর তীব্র আলোর ফিলামেন্ট তৈরি হয়। এইসব ফিলামেন্ট বাতাসে নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের অণুগুলোকে আয়নিত করে। পরবর্তীতে এটি বিভিন্ন ইলেকট্রন ছাড়ে, যা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত। ‘প্লাজমা’ নামে পরিচিত এই আয়নিত বাতাস বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে ওঠে।

পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা টাওয়ারের ওপর লেজার ফিলামেন্ট তৈরির ও প্রাকৃতিক বজ্রপাতের সংগৃহীত ডেটা তুলনা করে দেখেন। তারা লক্ষ্য করেন, বজ্রঝড়ের সময় ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় কাজ করে লেজারটি চারটি বজ্রপাতের গতিপথ সরিয়ে দিতে পেরেছে।

গবেষকরা হাইস্পিড ক্যামেরার সহায়তায় একটি বজ্রপাতের ভিডিও ধারণ করে দেখেন, এটি লেজারকে ৫০ মিটারেরও বেশি অনুসরণ করেছে। তারা বলেন, লেজার ব্যবহার করে প্রথম বজ্রপাতের ঘটনা থেকেই আমরা খুঁজে পেয়েছি বজ্র টাওয়ারে পৌঁছানোর আগে প্রায় ৬০ মিটার পর্যন্ত লেজারকে অনুসরণ করতে পারে। এর মানে, এটি সুরক্ষা পৃষ্ঠের ব্যাসার্ধ একশ ২০ মিটার থেকে বাড়িয়ে একশ ৮০ মিটার পর্যন্ত নিয়ে গেছে।