লায়ন কামরুন মালেককে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সম্মাননা

বার্ধক্য জয়ের টিকা হচ্ছে মনটাকে তরুণ রাখা : বিভাগীয় কমিশনার

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৮ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

সমাজসেবায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একুশে পদকপ্রাপ্ত লায়ন কামরুন মালেককে সম্মাননা প্রদান করেছে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ চট্টগ্রাম বিভাগ। এ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার নগরীর মোহরায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন। তিনি বলেন, বার্ধক্য কেউ চায় না। কিন্তু বার্ধক্যকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সব রোগের চিকিৎসা হয়। মৃত্যু আর বার্ধক্যের নাকি চিকিৎসা হয় না। আমরা কিন্তু এই বার্ধক্যকে জয় করতে পারি। কারণ মনের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই তরুণ। এই তারুণ্যটাকে আমরা বজায় রাখব। কিন্তু তাই বলে আমরা বার্ধক্যকে অতিক্রম করতে পারব না। তাহলে আমাদের যে টিকা নিতে হবে, সেটি হচ্ছে মনটাকে আমরা তরুণ রাখব। চিন্তাটাকে সবসময় রাখব সৃজনশীল।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমি যখন চাকরিতে প্রবেশ করি, বেশ কিছুদিন পর্যন্ত আমি দেখেছি যে, যখন একজন আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিতেন, অবসরে যেতেন, তখন আমরা তাকে ছাতা দিতাম, কোরআন শরীফ দিতাম এবং একটা হাদিয়া অন্য কিছু দিতাম। তখন আমরা ধরে নিতাম তিনি তার কর্মজীবন থেকে শুধু না, আসলে পার্থিব জীবন থেকে তিনি বিদায় নিচ্ছেন। তবে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের চেয়ে আমাদের আয়ুষ্কাল এখন এক বছর বেশি। আমরা ৭২ বা ৭৩ বছর বাঁচি। এখন আর এই ষাটে বৃদ্ধ হই না। আমরা বৃদ্ধ হই আরো পরে। এখানে একটা বিষয় ভালো লাগল, চট্টগ্রামে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ যে রকম শক্তিশালী, তাদের নিজস্ব স্থাপনা, তারা চিকিৎসা ব্যবস্থা শুরু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে কিন্তু এ রকম খুব কম আছে।

অনুষ্ঠানে একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, অনেকে জিজ্ঞেস করেন দেশের কী হবে। আমি বলি, দেশ যেখানে আছে সেখানে থাকবে। একদিকে ভারত, একদিকে বার্মা এবং আরেকদিকে বঙ্গোপসাগর আছে। চলুন না, আমরা নিজেদের নিয়ে চিন্তা করি। প্রত্যেকে যদি আমরা অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে পরিবার নিয়ে সুখে থাকতে পারি, তাহলে দেশ এমনি এগিয়ে যাবে। আমাদেরকে নিজেদের নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা পৃথিবীকে বদলাতে চাই, কিন্তু নিজেদের বদলাতে চাই না। চলুন আমরা প্রথমে আমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করি। তারপর আমাদের আশপাশে যারা আছেন তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি। তাহলে আমাদের সমাজ ও দেশ এগিয়ে যাবে।

উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা যে নির্মল চরিত্রের অধিকারী আছ, সেই চরিত্র ধরে রাখবে। কারণ চরিত্রটাকে ধরে রাখা খুবই দুরূহ ব্যাপার। যতটুকু সাধ্য সেটা যদি তোমরা করতে পারো, তবে তোমরা সফল হতে পারবে। চরিত্রটা তাই সবচেয়ে বড় জিনিস। অন্যান্য প্রাণী আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, প্রাণী জন্মের পর চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম নেয়। তাদের কিছু শিখিয়ে দিতে হয় না। একমাত্র মানুষকে কিন্তু মানুষ হতে হয়।

সম্মাননাপ্রাপ্ত লায়ন কামরুন মালেক বলেন, আমি মনে করি আল্লাহ তায়ালা আমাদের কিছুটা সৌভাগ্যবান করে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সেজন্য আমরা এখানে দায়বদ্ধ। আমরা লায়নিজম করি। লায়ন ছাড়াও আমরা অনেকভাবে কাজ করতে পারি। অনেকেই হয়তো জানেন না, লায়ন্স এমন একটা সংগঠন, পুরো বিশ্বের ননপলিটিক্যাল একটা সর্ববৃহৎ সেবা সংগঠন। আমাদের হেড অফিস হলো আমেরিকাতে। লায়নিজম ছাড়াও আমি উইম্যান চেম্বারের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি করেছি।

তিনি বলেন, এখানে ছোট ছোট মেয়েদের অভিভাবকদের আমি বলব, আপনারা ছেলেকে যেভাবে পড়াশোনা করাবেন, মেয়েকে ঠিক সেভাবে পড়াশোনা করাবেন। কোনো অবস্থায় মেয়েকে অবহেলা করবেন না। আমাদের সমাজে একটা মেয়ে হয়েছে শুনলে অনেক মানুষ মুখ কালো করে ফেলে। ছেলে হয়েছে শুনলে খুব খুশি হয়। ছেলেও আল্লাহর দান, মেয়েও আল্লাহর দান। আমরা চাই তোমরা ছোট ছোট মেয়েগুলি, তোমরা নিজের পায়ে দাঁড়াবে। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা মেয়েদের বাল্যবিবাহ থেকে দূরে রাখবেন।

বাচিক শিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় এবং বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি এ কে শামশুদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদুল আলম কাদেরী। বক্তব্য রাখেন প্রফেসর কাজী শাহাদাত হোসেন, পুষ্টিবিদ হাসিনা আকতার লিপি এবং চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এ জাফর। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ চট্টগ্রাম বিভাগের যুগ্ম সম্পাদক সহিদ সরওয়ান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, হাজী আবু তাহের, আইয়ুব আলী চৌধুরী দুলাল, জানে আলম জিকু, ইঞ্জিনিয়ার লোকমান হাকিম, মোহাম্মদ শাহজাহান, মতিলাল দেওয়ানজী ও বোরহান উদ্দীন। অনুষ্ঠানে দরিদ্র প্রবীণদের হাতে ত্রাণ তুলে দেয়া হয়। এছাড়া রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিন শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট ও অর্থ পুরস্কার প্রদান করেন অতিথিরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবায়িং হাউজের মালিকের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ান ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধব্যাটারি রিকশা জব্দ করায় মব সৃষ্টি করে কনস্টেবলকে মারধর