মোবাইলে রাখা প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফেরত না দেয়ায় মামুনকে নির্মমভাবে হত্যা করে তার বন্ধু শাহেদ হোসেন। এক লাখ টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসী ভাড়া করে হত্যার এই মিশন বাস্তবায়ন করা হয়। হত্যার পর রেল লাইনের পাশে ফেলে রাখা হয় মামুনের মরদেহ। গত মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজারের লিংকরোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই হত্যার মাস্টারমাইন্ড মো. শাহেদ হোসেনকে (৩০) গ্রেপ্তার করে র্যাব। গতকাল সকালে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তার মো. শাহেদ হোসেন ঈদগাঁও মাছুয়াখালী সিকদার পাড়ার মো. মতিউর রহমানের ছেলে। বর্তমানে তিনি শহরের ঝাউতলা গাড়ির মাঠ এলাকায় থাকেন।
র্যাব জানায়, কক্সবাজার সদরের খরুলিয়ার মৃত নবী হোসেনের ছেলে নিহত আব্দুল্লাহ আল–মামুন (৩০) একজন ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ী। লিংকরোড বাজারে তার ভিশন ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রয়ের একটি শো–রুম রয়েছে। ওই শো–রুমে মামুন তার বন্ধু শাহেদ ও শাহেদের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিনের সাথে শেয়ারের ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন।
র্যাব জানায়, কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ের একটি মেয়ের সাথে ঘাতক শাহেদ হোসেনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের দুজনের কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও শাহেদ তার মোবাইলে ধারণ করে রাখে। মেয়েটির সাথে প্রেমের সম্পর্কের অবনতি হলে শাহেদের মোবাইলে থাকা তাদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওগুলো ডিলিট করার জন্য বলা হয়। এতে কৌশলে শাহেদ ছবি ও ভিডিওগুলো বন্ধু মামুনের মোবাইলে রাখার জন্য পাঠায়। পরে ওই মেয়ের সামনে শাহেদের মোবাইল থেকে ছবি ও ভিডিওগুলো ডিলিট করা হয়। পরবর্তীতে মামুনের কাছে রাখা ছবি ও ভিডিওগুলো ফেরত চায় শাহেদ। কিন্তু এসব ছবি ও ভিডিও শাহেদকে দিতে অস্বীকার করে মামুন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মামুনকে হত্যার জন্য ছক আঁকে শাহেদ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৬ জুলাই রাত ৮টার দিকে আব্দুল্লাহ–আল–মামুনকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে শাহেদ। এ সময় মামুনকে বলা হয় এক জায়গায় যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বাহারছড়া বাজারে আসার জন্য। শাহেদের কথায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামুন বাহারছড়া বাজারে পৌঁছালে দুজনেই মোটরসাইকেলযোগে ঈদগাঁও কালিরছড়া বাজারের একটু আগে পৌঁছালে শাহেদ বন্ধু মামুনকে মোটরসাইকেল থামাতে বলে। মোটরসাইকেল থামানোর পরপরই ঈদগাঁওর শীর্ষ ডাকাতা মাছুয়াখালীর আলী আহদ প্রকাশ চুনতি মৌলভীর ছেলে শাহীন ওরফে লালুর নেতৃত্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী মামুনের মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে শাহেদকে বুঝিয়ে দেয়। এ সময় তাদের এক লাখ টাকা দেন শাহেদ। পরে মামুনের মোবাইলটি শাহেদ ভেঙে চুরমার করে পানিতে ফেলে দিয়ে চলে যায়। অপরদিকে শাহেদের নির্দেশে ডাকাত শাহীনের নেতৃত্বে মামুনকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা। ৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে রামু রশিদ নগর ইউনিয়নের খাদেমের পাড়া এলাকার রেললাইনের পূর্বপাশে হাত–পা বাঁধা অবস্থায় মামুনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, এই মৃত্যুর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে এসব তথ্য বের হয়ে আসে। যার প্রেক্ষিতে ক্লুলেস এই হত্যার রহস্য উন্মোচন করে মূল পরিকল্পনাকারী নিহত মামুনের বন্ধু শাহেদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব–১৫।