রোহিঙ্গা নির্যাতনের বর্ণনা শুনতে কক্সবাজারে এসেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খানের নেতৃত্বে আইসিসি প্রতিনিধি দল। গতকাল বুধবার বিকেলে তিনি কক্সবাজারে পৌঁছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে আইসিসি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উখিয়ার ১ ও ১২ নম্বর ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।
গতকাল বুধবার কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে করিম আসাদ আহমাদ খান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ও তাদের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চালানো নির্যাতন–নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য কক্সবাজার সফর এসেছেন নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খান।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ও এর পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন–পীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ এর পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে। রোহিঙ্গাদের উপর চালানো ওই নির্যাতন ও নিপীড়নকে ইতোমধ্যে ‘জেনোসাইড’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ওই নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর কিছুদিন পর এরসঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করে আইসিসি। কিন্তু বাংলাদেশ আইসিসির সদস্যভুক্ত রাষ্ট্র হলেও মিয়ানমার এর সদস্য না হওয়ায় এই আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলে মিয়ানমার।
তবে আইসিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সদস্য রাষ্ট্র না হলেও রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের ঘটনার বিচারে আইনী কোনো সমস্যা নেই। এরপর এনিয়ে আইসিসিতে দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নির্যাতনের ব্যাপকতা নিয়ে তদন্ত শুরু করে আইসিসির প্রসিকিউশন বিভাগ। আর এ তদন্ত প্রক্রিয়ার তথ্যানুসন্ধানের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার চারদিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন করিম আসাদ আহমাদ খান। সফরের দ্বিতীয়দিন বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর কক্সবাজারে আসেন আইসিসির এই কৌঁসুলি।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, বুধবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে কক্সবাজার পৌঁছান আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম এ এ খান। তার সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তাও রয়েছেন। তারা বিমানবন্দর থেকে সরাসরি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে আসেন এবং কমিশনের সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ও তাদের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার কারণে ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং ক্যাম্পের নারী ও শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন আইসিসি কৌঁসুলি।
আজ বৃহস্পতিবার আইসিসি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উখিয়ার ১ ও ১২ নম্বর ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। সেখানে তারা আইসিসি নির্ধারিত রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষদের সঙ্গে কথা বলবেন। যাদের সঙ্গে কথা বলবেন তারা রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় সাক্ষ্য দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
