রেশনকার্ড প্রথা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এখনো চালু আছে।সরকারি মূল্যে মানুষ প্রতি সপ্তাহ/ মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এই কার্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। পাকিস্তানি আমলে ও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশে এই প্রথা চালু ছিল সময়ের পরিবর্তনে যা আর নেই।এই রেশন কার্ড প্রথায় মধ্যবিত্তদের অনেক উপকার হয়েছে।অতি সমপ্রতি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস কোভিডকালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বিনামূল্যে মানুষের দুয়ারে রেশন প্রদানের কথা ঘোষণা করেছে। নির্বাচনে বিজয়ের পর তারা জুন থেকে এই কার্যক্রম শুরু করবেন বলে নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছেন। কোভিড -১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ এর এই দুঃসময়ে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তরা আজ অসহায়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন বাংলাদেশে করোনা সনাক্ত হয়, সেই সময় থেকে অদ্যাবধি সরকার টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, চিনি, তেল বিক্রির কার্যক্রম চালাচ্ছে যদিও তা নিয়মিত নয়। বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির এই বিক্রয় কার্যক্রম চলছে। কিনু্ত প্রখর রোদে লাইন ধরে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে মানুষ এই পণ্য কিনছে। তবে সকলের ক্ষেত্রে লাইন ধরে এই সমস্ত পণ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। কেউ সময় জানে না, কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে, কেউ সময়ের অভাবে এই পণ্য কিনতে পারছে না।দেশের অনেক মানুষ আজ চাকুরীচ্যুত হয়ে বেকার।এদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত। এই জনগোষ্ঠী না পারে বলতে না পারে সইতে। অনেকে টিসিবির সব পণ্য ক্রয় করতে পারে না। যদিও অতি সমপ্রতি টিসিবির গাড়ির সব পণ্য কেনার বাধ্যতামূলক প্রথা বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বেসরকারি সেক্টর ঝুঁকির মুখে। মুক্তিযুদ্ধের পর অধিকাংশ সাধারণ মানুষ এই রেশনের উপর নির্ভরশীল ছিল। অন্তত জীবনের অত্যাবশ্যক পণ্য ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি তখন নিশ্চিত ছিল। এখন টিসিবির চিনির কেজি ৫৫টাকা। যা দোকানে ৭০ টাকা। তেল কেজি ১০০টাকা। দোকানে ১৩০/১৪০ টাকা। ডাল ৫০ টাকা। দোকানে ৭০/৮০ টাকা। কিনু্ত টিসিবির এই পণ্য সকল মানুষ কিনতে পারছে না সময় এবং বিতরণ প্রক্রিয়ার কারণে। বৈশ্বিক অর্থনীতি আজ ক্রমশ স্থবির হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের মতো দেশ আজ এই অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আহছানুল আলম পারভেজের মতে ‘অর্থনীতিতে এখন আর ম্যাক্রো, মাইক্রো নেই। এখনকার অর্থনীতি হচ্ছে বেঁচে থাকার অর্থনীতি। হাল টেনে ধরার অর্থনীতি।’ মোদ্দা কথা এই দেশের মানুষ আজ কোভিড মন্দা অর্থনীতি মোকাবেলা করছে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের ছাঁটাই, বেতন ২৫ ভাগ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতির শিকার মানুষগুলো চাকুরী ছাড়তেও পারছেন না আবার চাকুরীর সময়ে টিসিবির গাড়ির লাইনেও দাঁড়াতে পারছেন না। কিনু্ত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য তাদের ক্রয় করতে হচ্ছে বর্ধিত মূল্যে।
ফলে তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। অনাগত ভবিষ্যত দেখছে অন্ধকার। এই কোভিড-১৯ কবে দূর হবে, সেটি আজ উন্নত বিশ্বের বিজ্ঞানীরাও বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় সরকার ওয়ার্ড ভিত্তিক রেশন কার্ড প্রথা পুনরায় চালু করলে সাধারণ মানুষ ভোগ্যপণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সুবিধা পাবে। মাথা থেকে সীমিত আয়ের অসীম ব্যয়ের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কমবে। আজ অসহায় মানুষের পাশে ন্যায্যমূল্য দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের একমাত্র উপায় রেশন ব্যবস্থা প্রবর্তন। তাই অতিসত্বর রেশন কার্ড প্রথা পুনঃপ্রবর্তন করলে সাধারণ মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে বলে মনে করি। ফলে টিসিবির কার্যক্রম ও সরকারকে পরিচালনা করতে হবে না। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে টিসিবির পণ্য একই মানুষ প্রতিদিন লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রয় করে অধিক মূল্যে বিক্রি করেছে। রেশন কার্ড চালু করলে এই অনিয়মও বন্ধ হবে।