রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী (১৮৬৪–১৯১৯)। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ও দর্শনবিষয়ক লেখক ও সাহিত্যিক। ভাষাতত্ত্ব, প্রাচ্য–প্রতীচ্য দর্শন, বিজ্ঞান, বেদবিদ্যা, লোকসাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ছিল। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও দর্শনের জটিল তত্ত্ব প্রাঞ্জল ভাষায় তিনি বিশ্লেষণ করেছেন। মাতৃভাষার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চাকে তিনি প্রাধান্য দিতেন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ (১৮৯৪) প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। ১৮৬৪ সালের ২০ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জেমোকান্দিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম গোবিন্দসুন্দর এবং মা চন্দ্রকামিনী। পদার্থবিদ্যা ও রসায়নশাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ (১৮৮৬) এবং পদার্থবিদ্যায় এমএ (১৮৮৭) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৮৮ সালে তিনি প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি অর্জন করেন। রামেন্দ্রসুন্দর ১৮৯২ সালে কলকাতা রিপন কলেজের বিজ্ঞান শাস্ত্রের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং ১৯০৩ সালে কলেজের অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদেই কর্মরত ছিলেন। সাধনা, নবজীবন ও ভারতী পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশের মধ্য দিয়ে রামেন্দ্রসুন্দরের সাহিত্যিক জীবনের সূচনা হয়। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ (১৮৯৪) প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। ১৯০৪ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত তিনি এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯১৯ সালে এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৮৯৯–১৯০৩ এবং ১৯১৭–১৮ সাল পর্যন্ত দুবার তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। রামেন্দ্রসুন্দর ছিলেন একজন উগ্র স্বদেশপ্রেমিক এবং জাতিভেদ প্রথার বিরোধী।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের তিনি ঘোর বিরোধী ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় সে বছর তাঁর আহবানে একদিন সমগ্র বাংলাদেশে অরন্ধন দিবস পালিত হয়। বঙ্গভঙ্গের বিরোধী প্রতিক্রিয়ায় এ সময় তিনি রচনা করেন বঙ্গক্ষ্মীর ব্রতকথা (১৯০৬) গ্রন্থখানি। তাঁর রচনা মুক্তচিন্তার আলোকে দীপ্ত ও সাহিত্যরসে সমৃদ্ধ। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে– জিজ্ঞাসা (১৯০৩), বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা (১৯০৬), চরিত কথা (১৯১৩), শব্দকথা (১৯১৭), বিজ্ঞান জ্যোতিষ সমাজ, ধর্ম্মের জয়, ঐতরেয় ব্রাহ্মণ (অনুবাদ, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ), জগৎ কথা, কর্ম্ম–কথা (১৯১৩), বিচিত্র জগৎ (১৯১৩), প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের স্থূল মর্ম্ম, মায়া–পুরী, প্রকৃতি (১৩০৩ বঙ্গাব্দ), বিচিত্র প্রসঙ্গ (১৩২১ বঙ্গাব্দ), প্রকৃতি (১৮৯৬)। ১৯১৯ সালের ৬ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।