বছরের পর বছর বোরো মৌসুমে চাষাবাদ হয় না রাঙ্গুনিয়ার বেশ কিছু জমিতে। সেচ সংকটের কারণে এভাবে অনাবাদি পড়ে থাকে বিলগুলো। একইভাবে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মুরাদনগর ও কুলকুরমাই গ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত টিব্বা বিল, মগ বিল, খিয়াং বিলের অন্তত তিনশ একর কৃষি জমি গত চার বছর ধরে বোরো মৌসুমে অনাবাদি পড়ে রয়েছে। এবারো এসব কৃষি জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিলগুলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুলকুরমাই খাল ভরাট হয়ে গেছে। খালটিতে পানি নেই। পানি না থাকায় চাষাবাদের জন্য থাকা একটি স্কিম (সেচযন্ত্র) ঘর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। রোয়াজারহাট খালের প্রবেশ মুখেই স্লুইচ গেট দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এতে ইছামতী নদী থেকে কুলকুরমাই খালে পানি প্রবেশ করতে পারে না।
খালের বিভিন্ন স্পটে অপরিকল্পিত পাকা স্থাপনা নির্মাণ, আশেপাশের বসতবাড়ির বর্জ্যে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে কুলকুরমাই খালটি। ফলে পৌরসভার মুরাদনগর ও কুলকুরমাই গ্রামের আশেপাশের ৩০০ একর জমি খরা মৌসুমে প্রতিবছর অনাবাদি থেকে যায় বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। খরা মৌসুমে অনাবাদি থাকা এসব বিলকে আবাদের আওতায় আনতে জরুরি ভিত্তিতে খননের আবেদন করলেও তা আলোর মুখ দেখছে না গত কয়েক বছরেও। জরুরি ভিত্তিতে খালের খননসহ সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ কৃষকরাও।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বোরো মৌসুমের শুরুতে টিব্বা বিল, মগ বিল, খিয়াং বিলসহ আশেপাশের বিলের কৃষকদের পানির জন্য হাহাকার করতে হয়। অথচ কৃষকদের সুবিধার্থে মৌসুমের শুরুতে বিলের পার্শ্ববর্তী কুলকুরমাই খালে আশেপাশের বিভিন্ন নদী থেকে পানি সরবরাহ করা এবং বিভিন্ন স্কিম ম্যানেজারদের সহায়তায় কৃষি জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
কিন্তু গুমাই বিলের সঙ্গে সংযুক্ত এই কুলকুরমাই খাল অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়াও এসব খালের পাড় ভাঙন, খালের গতিপথ দখল করে স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে বোরো মৌসুমে খালে পানি প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া এই খালের রোয়াজারহাট অংশে বিকল স্লুইচ গেটের যথাযথ তদারকির অভাবে এসব বিলে প্রতি বছর অনাবাদি থাকে ৩শ একর জমি। এভাবে বছরের পর বছর এসব বিল অনাবাদি থাকলেও এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো মাথাব্যথা নেই।
স্থানীয় দৈবকীনন্দন কৃষি সমবায় সমিতির সভাপতি আরিফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কুলকুরমাই খালের খনন, পাড় ভাঙন রোধ, প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় প্রায় প্রতিবছরই খালে পানি শুকিয়ে যায়। এতে সেচের পানি সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
বিগত কয়েক বছর ধরে এই পরিস্থিতি আরও ব্যাপক আকার ধারণ করায় কুলকুরমাই খাল সংশ্লিষ্ট বিলগুলোতে খরা মৌসুমে একেবারেই চাষাবাদ সম্ভব হয় না। পানি ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসায় কৃষকরা চাষাবাদে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে।
কুলকুরমাই খালের স্কিম ব্যবস্থাপক ছৈয়দুল হক চৌধুরী বাদশা বলেন, গুমাই বিল থেকে কুরমাই খালের প্রবেশ মুখেই ভরাট হয়ে গেছে। পশ্চিমে ইছামতী থেকেও প্রবেশ মুখেই একটি স্লুইচ গেইট বছরে পর বছর বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এর ফলে খালে পানি প্রবেশ করতে পারে না।
তাই অন্তত গুমাই বিল থেকে শুরু করে খালের ৫ কিলোমিটার অংশ খনন করা এবং বিকল স্লুইচ গেট মেরামত করে খালে পানির স্বাভাবিক গতিপথ সচল করতে হবে। না হলে দিন দিন অনাবাদী জমির পরিমাণ বাড়বে এবং কৃষকরাও চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
পানি ব্যবস্থাপনা অ্যাসোসিয়েশন ইছামতি ইউনিটের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, কুরকুরমাই খাল ইছামতি নদীর শাখা। ৮০ দশকে খালটি খনন করা হয়েছিল। এই খালে স্কিম মেশিন বসিয়ে সেচ কাজ করা হয়। খালটি দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় আশেপাশের বিলের সেচকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। এবার অনাবাদি জমিগুলো আবাদের আওতায় আনতে স্কিমঘরের মেশিন পানির উৎস বরাবর সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, উপজেলায় অনেক খাল রয়েছে যা অনেকাংশে ভরাট হয়ে গেছে। খাল খনন আমাদের কাজ নয়। খননের বিষয়টি কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে অবহিত করা হয়েছে।
বিএডিসি’র (কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) চট্টগ্রামের উপসহকারী কৃষি শাহেদুল ইসলাম বলেন, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার জমিগুলো ইছামতী সেচ ইউনিটের আওতাধীন। তাই এসবের দায়িত্ব পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তারপরও কৃষকদের সুবিধার্থে সেখানে সেচের ব্যবস্থা করতে আমরা কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের প্রস্তাবটা প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে।
এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটি নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, কুরমাই খালসহ গুমাইবিলের ১৩টি খালের ৫২ কিলোমিটার খননের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছি। অচিরেই আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করব।