পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রমজানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চাহিদার চেয়ে বেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত পণ্য আসছে। তারপরও পণ্যের দাম কমছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। উলটো কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। অভিযোগ আছে, বাজারে দাম বাড়ানোর কৌশল হিসাবে আমদানিকারকরা বন্দরে পণ্য খালাস না করে সাগরে ভাসমান গুদামে রেখেছেন। তাই পণ্য আমদানি বেশি হলেও রমজানে দাম বাড়ার শঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ী–আমদানিকারকরা বলছেন, রমজান মাসে বিভিন্ন পণ্যের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এবার এসব পণ্যের চাহিদার বেশি আমদানি করা হয়েছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আরও আমদানি করা হবে। তাই রজমানে কোনো পণ্যের সংকট হবে না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রমজানে ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, ডাল, ছোলা, খেজুরসহ বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। রমজান ঘিরে দেশের মানুষ ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ে শঙ্কিত থাকে। তবে এবার বাজারে কোনো পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টন; যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬ কোটি ৫৮ লাখ টন। জানুয়ারিতে পাম ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টন। চিনি আমদানি হয় ১ লাখ ৪ হাজার টন। পেঁয়াজ আমদানি হয় ৮২ হাজার টন। ডাল আমদানি হয় ১ লাখ ৯৫ হাজার টন। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছোলা আমদানি হয়েছে ২৮ হাজার ৩৩৪ টন, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১২ হাজার ৬৭৬ টন। খেজুর আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৮ টন। এভাবে রমজানের প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি হওয়ায় বাজারে সংকট থাকবে না বলে আমদানিকারকরা জানিয়েছেন। আমদানিকারকরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এখনো পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। রাত–দিনজুড়ে চলছে পণ্য খালাসের কাজ। পণ্যবাহী শতাধিক জাহাজ খালাসের অপেক্ষায় এখনো বন্দরে রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে আরও নিত্যপণ্য আমদানি হবে। ফলে সরবরাহ বাড়বে।
এখানে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পবিত্র রমজানকে উপলক্ষ করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে কারসাজি করে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। যেমন কিছু দিনের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বেড়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ধর্মীয় কোনো উৎসব উপলক্ষে যেখানে পণ্যসামগ্রীর দাম কমানো হয়, সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্নচিত্র পরিলক্ষিত হয় আমাদের দেশে। এখানে বাড়তি মুনাফা পকেটস্থ করার দুরভিসন্ধিতে ভোক্তাদের জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়, যা অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষের আয় ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের মধ্যে একটা বড় ব্যবধান রচিত হয়েছে। একারণে দৃশ্যত বাজারে কোনো পণ্যের অভাব না থাকলেও মানুষ তা কিনতে পারছে না। সামর্থ্যের অভাবই এখানে প্রধান। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দৈশিক ও বৈশ্বিক কারণ যাই হোক, তা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। বাড়ছে এক শ্রেণীর অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীর কারণে। বলা বাহুল্য, দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নবিত্তের মানুষের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তা এতটাই শোচনীয় যে, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মধ্যবিত্তের মানুষও দিশাহারা অবস্থায় পতিত হয়েছে। টিসিবির পণ্য সংগ্রহে দীর্ঘ লাইনই তা প্রমাণ করে। দেশের অধিকাংশ মানুষ নিত্যপণ্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিতে সম্পূর্ণ অসহায় হয়ে পড়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পণ্যের দামের ঊর্ধ্বমুখী রশি টেনে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তার ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। সয়াবিন তেলের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। সয়াবিনের দাম ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত দফায় দফায় বাড়িয়েছে।
কাজেই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্বলতার কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া মুনাফা করার সুযোগ পায়। আমরা আশা করবো, এবার রমজান মাসে কোনো অবস্থাতেই পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করতে দেওয়া হবে না।