এক বোন ছাড়া বাবা–মাসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছিল ঘাতকরা– সেই শোক বুকে নিয়ে দেশের মাটিতে পা রেখে হন্তারকদের বিচারের প্রত্যয় জানিয়েছিলেন, যে বাঙালির মুক্তির জন্য বাবা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদেরকে ‘হারানো স্বজনদের’ জায়গায় বসিয়ে এই জাতির উন্নয়নে নিজেকে সঁপেছিলেন। এরপর এই চার দশকের পথচলায় জেল–জুলুমের সঙ্গে বার বার বন্দুক তাক করা হয়েছে তার দিকে, সন্ত্রাসীর বোমা–গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে– আর তিনি অবিরাম ছুটে চলেছেন লক্ষ্য অর্জনে, সংগ্রামী এই রাজনীতিক আর কেউ নন, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজের।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গত শনিবার আওয়ামী লীগের আয়োজনে ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক বিশেষ ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে এভাবে নেত্রীর মূল্যায়ন করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী এবং শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি। তারা দুজনই আলোচনার সূত্রপাত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপট নিয়ে।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা কীভাবে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করে দেশের রাজনীতির পটপরিবর্তনের সূচনা করেন, আওয়ামী লীগকে কীভাবে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন– তার সংগ্রামের কথা শোনান আওয়ামী লীগের এই দুই জ্যেষ্ঠ নেতা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা খবর পান, ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। ১৭ মে শেখ হাসিনা যেদিন দেশে ফেরেন, সেদিন প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে হাজার হাজার জনতা জড় হয়েছিল তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরে। বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাওয়া হয় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে, সেখানে লাখো জনতার উপস্থিতিতে এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন, সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা–মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই।
চট্টগ্রামের লালদিঘীর ময়দান, নাটোরের সমাবেশে শেখ হাসিনার উপর হামলাসহ তার প্রাণনাশের নানা চেষ্টার কথা তুলে ধরে মতিয়া চৌধুরী বলেন, জেল–জুলুম, কারা–নির্যাতন, এসব শুধু তার পথ চলার পাথেয় নয়, বলতে গেলে প্রতিক্ষণের সঙ্গী। কিন্তু নিজের উপর আক্রমণের বিচার কিন্তু হয়নি। তার প্রতিজ্ঞা এত সুকঠিন ছিল যে তিনি তা থেকে এক চুলও নড়েননি।