গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রাম একাডেমির ফয়েজ নুরনাহার মিলনায়তন ছিলো চিত্ররূপ সৃষ্টি হওয়ার মতো উৎসবমুখর এক সন্ধ্যা। বাংলাদেশের মূল কেন্দ্র ঢাকা থেকে আগত আমাদের সবার প্রিয়ভাজন কবি সুজন বড়ুয়া আমাদের উপহার দিলেন এক বাংলাদেশী কবি, সাহিত্যিক (সুইডেনে বসবাসরত) আনিসুর রহমানকে। বাচিকশিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় চলছিল ‘সাহিত্য চর্চা: প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে’ প্রতিপাদ্যের বিস্তার। বলতে গেলে ঠাঁসা অডিয়েন্স, হিমগিরির নিস্তব্ধতায় দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক কবি রাশেদ রউফের উদ্দীপনাময় উৎসাহে ‘প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে’ ঝলমল হয়ে উঠতে শুরু করে। আমাদের সবার দৃষ্টির আলো গিয়ে পড়ে বাঙালি সুইডিশ কবি আনিসুর রহমান এবং কবি সুজন বড়ুয়ার ওপর। ইতিমধ্যেই এই কবি তাঁর সাথে মঞ্চে উপবিষ্ট প্রাজ্ঞ অতিথি কবি সম্পর্কে উপস্থিত আমাদের কাছে একটি বিস্তৃত ধারণা দিয়েছিলেন। মঞ্চালোকিত করা আমাদের সবার প্রিয় প্রফেসর রীতা দত্ত, ড. উদিতি দাশ সোমা তাঁদের সাবলীল বক্তব্যে উপস্থিত লেখকদের মুগ্ধতায় আছন্ন করে রাখলেন। ‘প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে’ মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে মাইক্রফোনে মুখ রাখলেন লেখক সাহিত্যিক কবি আনিসুর রহমান। ক্রমে উনি আমাদের মাঝে তাঁর মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছিলেন। উনি যখন বললেন, সৃষ্টিশীলতায় শিশু হতে হবে, মায়ের কাছে গল্প করে যে শিশু তার মতো। সার্বিক অলসতা ঝেড়ে ফেলে লিখতে বসতে হবে। লেখকের লিখতে বসায়ও অনেক লেখা হয়ে যাওয়া। উনি আমাদের জানান দিলেন, লেখক যদি প্রকৃত লেখক হওয়ার বাসনা রাখেন তা হলে যেন সাহিত্যে আত্মতৃপ্তি আত্মসম্মোহন ভুলে যান। আমার প্রশ্ন ছিল ‘সাহিত্যে তৃপ্তি’ কী? আমি তা ভুলে গিয়ে অন্য প্রশ্ন করেছিলাম। সে যা-ই হোক, উনি বললেন, উনি এ যাবত যা যা লিখেছেন তা ভুলে গেছেন। তাঁর মতে লেখককে তাঁর আত্মশ্লাঘা একেবারেই ভুলে যেতে হবে। উনার প্রতি আমার আরেকটি প্রশ্ন ছিল, যা করা হয় নি। তা হলো, ‘শুরুটাকে চূড়ান্ত গন্তব্যে পোঁছে দেওয়াই কি কেন্দ্রে পৌঁছা?’ প্রাজ্ঞজন প্রচুর সহনশীলতায় আমাদের প্রত্যেক লেখকের তাঁর প্রতি প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর যেন একদম হাতে কলমেই দিলেন। উনার একের পর এক বাণীতে আমরা উপস্থিত লেখকবৃন্দ মুগ্ধতায় বিশ্রুত হয়েছিলাম।
ধন্যবাদ দিতে হয় প্রিয় কবি সুজন বড়ুয়াকে। উনার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে প্রিয় লেখক, প্রাজ্ঞ-জীবনের মানুষ আনিসুর রহমানকে আমাদেরকে ক্ষণিক সময়ের জন্য উপহার দেওয়া।