করোনাভাইরাস মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রে বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের পুনর্বহালের জন্য সরকারের ‘পে–চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম’ (পিপিপি) কর্মসূচির অর্থ আত্মসাতের মামলায় নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে দুই বাংলাদেশি নির্মাণ ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন নূরুস সাফা (৬৫) এবং তার পুত্র মইদুল সাফা (৩৪)। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চুরি, জালিয়াতি এবং ব্যবসার ভুয়া কাগজপত্র সংরক্ষণের অভিযোগ রয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের’ (এফবিআই) তদন্তের পর গত বৃহস্পতিবার জাল কাগজপত্রসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ব্রুকলিন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এরিক গঞ্জালেজ। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাকে চাঙ্গা করতে পিপিপি ঋণ মঞ্জুর করা হয় খুব সহজ শর্তে। সেই সুযোগ নিয়ে পিতা–পুত্রের মালিকানাধীন ‘রাহিল কন্ট্রাক্টিং ইনক’ ঋণের আবেদন করে। আবেদনের সঙ্গে জাল কাগজপত্র ছাড়াও ট্যাঙ রিটার্নের ভুয়া কাগজ জমা দেওয়া হয়। এমনকি ট্যাঙ প্রস্তুতকারীর স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছিল বলে তদন্তে উদঘাটিত হয়।
তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফেডারেল সরকার ‘পে–চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম’ (পিপিপি) ঋণ হিসেবে ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭৭ ডলার ৫০ সেন্ট মঞ্জুর করে। এ অর্থ ওই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার পরই তা ব্যক্তিগত কাজে খরচ করা হয়।
মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আরও জানান, পিপিপি ঋণের অর্থ খরচ করার একটি শর্তও তারা পালন করেননি বলে আদালতে অভিযোগ করা হয়। ঋণের অর্থ তোলার পরই ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬৭০ ডলার দিয়ে তারা নিউ জার্সিতে ৫ বেডরুমের দুটি বাড়ি কিনেছেন। একই সময় ২০২১ মডেলের একটি বিএমডব্লিউ এম৫ স্পোর্টস সিডান গাড়ি কিনতে অগ্রিম হিসেবে ৭১ হাজার ডলার দিয়েছেন। তদন্তে উঠে আসে, ঋণের বাকি অর্থও খরচ করা হয়েছে ব্যক্তিগত বিলাসিতায়।
গ্রেপ্তারের পর পিতা–পুত্রকে ব্রুকলিন সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি ডিনা ডগলাসের এজলাসে হাজির করা হলে উভয়কে জামিন দেওয়া হয়। মামলার পরবর্তী তারিখ হচ্ছে ৩০ অক্টোবর।
করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার পিপিপি ঋণ বরাদ্দ করেছিল। সহজশর্তে এই ঋণ মঞ্জুর করা হয় বেকার হয়ে পড়া শ্রমিক ও কর্মচারীদের বকেয়াসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বা মর্টগেজ পরিশোধের জন্য। প্রয়োজনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করাও যাবে। কিন্তু জাল–কাগজ এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে পিপিপি ঋণ হিসেবে নিউ ইয়র্ক অঞ্চলের অনেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে মাঠে নেমেছে এফবিআইসহ সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। ইতোমধ্যে মিশিগান, শিকাগো, ম্যারিল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া, টেঙাস, নিউ জার্সি ও পেনসিলভেনিয়াতে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। নিউ ইয়র্কের একটি বেসমেন্টে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব দেখিয়ে বেশ কয়েক মিলিয়ন ডলারের পিপিপি ঋণ নেওয়ার ব্যাপারেও তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।