যতীন্দ্রমোহন বাগচী। কবি ও সম্পাদক। রবীন্দ্রসমকালীন কবিদের মধ্যে অন্যতম বিশিষ্ট কবি। কবিতা রচনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করেছেন বেশ কিছুকাল। একটি উপন্যাস ও স্মৃতিকথাও রয়েছে তাঁর। ১৮৭৮ সালের ২৭ জানুয়ারি নদীয়ার জামশেদপুরে যতীন্দ্রমোহন বাগচীর জন্ম। কলকাতার ডাফ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে যতীন্দ্রমোহন বিচারপতির সারদাচরণ মিত্রের ব্যক্তিগত সচিবরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কলকাতা কর্পোরেশনে নাটোর মহারাজের ব্যক্তিগত সচিব ও জমিদারির সুপারিনটেন্ডেন্ট পদে এবং কর কোম্পানি ও এফ.এন গুপ্ত কোম্পানির ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। যতীন্দ্রমোহন বহু সাহিত্যিক পত্রিকায় গঠনমূলক অবদান রেখেছেন। ১৯০৯ থেকে ১৯১৩ পর্যন্ত মানসী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯২১ এবং ১৯২২ সালে তিনি যমুনা পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৮ পূর্বাচল পত্রিকার মালিক এবং সম্পাদক ছিলেন। তার রচনায় তার সমকালীন রবীন্দ্র সাহিত্যের প্রভাব লক্ষ্য করে যায়। তাকে রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচনা করে হয়। পল্লী-প্রীতি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিমানসের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। ‘পথের পাঁচালী’র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কবি জীবনানন্দ দাশের মত তার কাব্যবস্তু নিসর্গ-সৌন্দর্যে চিত্ররূপময়। গ্রাম বাঙলার শ্যামল স্নিগ্ধ রূপ উন্মোচনে তিনি প্রয়াসী হয়েছেন। গ্রাম জীবনের অতি সাধারণ বিষয় ও সুখ-দুঃখ তিনি সহজ সরল ভাষায় সহৃদয়তার সঙ্গে তাৎপর্যমণ্ডিত করে প্রকাশ করেছেন। তাঁর কবিতা লেখার শুরু কিশোরকাল থেকে। একুশ বছর বয়স থেকে পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর রচনা প্রকাশিত হতে থাকে। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘লেখা’। এটি একটি কাব্যগ্রন্থ। অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে ‘রেখা’, ‘অপরাজিতা’, ‘নাগকেশর’, ‘কাব্যমালঞ্চ’, ‘পাঞ্চজন্য’, ‘পথের সাথী’,‘বন্ধুর দান’, ‘জাগরণী’, ‘নীহারিকা’ এবং ‘মহাভারতী’। ‘রবীন্দ্রনাথ ও যুগসাহিত্য’ নামে একটি স্মৃতিকথা এবং ‘সাথী’ নামে একটি উপন্যাসও রয়েছে তাঁর। পল্লীপ্রকৃতি, পল্লীর সহজ-সরল মানবজীবন, মানুষের দুঃখ-কষ্ট, নারীর নীরব বেদনাবোধ যতীন্দ্রমোহন বাগচীর রচনার প্রধান বিষয়বস্তু। কখনো কখনো নাগরিক জীবনের সাথে সরল ও সাধারণ গ্রামীণ জীবনের তুলনাও ফুটে উঠেছে নিপুণভাবে। বিষয়বস্তুর স্পষ্টতা, সহজ কিন্তু প্রাঞ্জল ভাষা আর ছন্দের কারুকার্য তাঁর কবিতাকে দিয়েছে বিশিষ্টতা। ‘মানসী’ ও ‘যমুনা’ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক এবং ‘পূর্বাচল’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।