মুহম্মদ আবদুল হাই। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও ধ্বনিবিজ্ঞানী হিসেবে সুপরিচিত। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুসন্ধিৎসা। ভাষায় ধ্বনির ব্যবহার, উচ্চারণ ও গঠন প্রকৃতি নিয়ে তিনি বস্তুনিষ্ঠ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা করেছেন। খ্যাতিমান হয়েছেন ধ্বনিতাত্ত্বিক বা ধ্বনিবিজ্ঞানী হিসেবে। আবদুল হাইয়ের জন্ম ১৯১৯ সালের ২৬ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে। ১৯৪২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ‘বেঙ্গল জুনিয়র সার্ভিস’–এ বেশ কিছুকাল শিক্ষকতা করেন তিনি। পরবর্তীকালে কৃষ্ণনগর কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। আবদুল হাইয়ের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ধ্বনিবিজ্ঞানে। এ বিষয়ে গবেষণাও করেছেন বিস্তর। প্রাণের গভীরে ছিল বাঙালি, বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি প্রবল অনুরাগ। আর তাই পাকিস্তান সরকার রেডিও ও টেলিভিশনে রবীন্দ্র সংগীত প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে প্রতিবাদে সোচ্চার হন তিনি। পাক সরকার আরবি ও রোমান হরফে বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার বিরোধিতায়ও সরব ছিলেন আবদুল হাই। পাকিস্তানি সংস্কৃতির আগ্রাসনে বাঙালির নিজস্ব ঐতিহ্য ও কৃষ্টি যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্য তাঁর নানান কর্ম তৎপরতা ছিল পরাধীন দেশে অন্যদের প্রেরণার উৎস।
আবদুল হাই রচিত বিভিন্ন গ্রন্থের মধ্যে ‘ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব’, ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি’, ‘বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন’, ‘তোষামদ ও রাজনীতির ভাষা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গবেষণাধর্মী ও চিন্তাশীল বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেও তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালের ৩ জুন রেললাইনে কাটা পড়ে প্রথিতযশা এই মনীষীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।