করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার আগামীকাল থেকে ৮ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। তবে এই লকডাউনে রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প ও অন্যান্য কলকারখানাকে আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এছাড়া মার্কেট-শপিং সেন্টার বন্ধ থাকবে বলে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে জানিয়েছে। লকডাউনে মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, করোনার সংক্রমণ কি শুধু শপিংমল-মার্কেটে? আমরা শিল্প কারখানার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে চাই। মার্কেটগুলোতে ব্যবসা হয় কেবল রমজান মাসে। আর এখন যদি মার্কেট বন্ধ থাকে, তাহলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টেরি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান দৈনিক আজাদীকে বলেন, টেরি বাজার ঈদমুখী বাজার।
ব্যবসায়ীরা ১২ মাসের মধ্যে ১টা মাসের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এখন এই মাস যদি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারেন তাহলে একেবারে পথে বসতে হবে। আমাদের এই টেরি বাজারে ১৫-২০ হাজার দোকান কর্মচারী আছে। তারা ঈদ উপলক্ষে বেতনের সাথে বোনাস পেয়ে থাকেন। গত বছর আমরা যেহেতু করোনার জন্য রমজানে দোকান খুলতে পারিনি তাই তাদের কোনোমতে বেতনটা দিয়েছি। বোনাস দিতে পারিনি। এবারের পরিস্থিতি আরো খারাপ। কারণ গত তিন মাস ধরে ব্যবসায়ীরা ঈদের প্রস্তুতি নিয়েছেন। শেষ মুহূর্তে করোনার সংক্রমণ বাড়ার কারণে সরকার লকডাউন ঘোষণা করে। তবে সারা দেশের সব কিছু বন্ধ থাকলে আমাদের আক্ষেপ থাকত না। গার্মেন্টস শিল্প কারখানা খোলা থাকবে, কিন্তু মার্কেট বন্ধ থাকবে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আমরা এই রমজান মাসে সীমিত সময়ের জন্য ব্যবসা করতে চাই। আমরা সরকারকে বুঝাতে চাই, আমাদের বিষয়টা যাতে মানবিক বিবেচনায় দেখে। আমাদের ওপর আন্দোলনের চাপ আছে। প্রতিনিয়ত আমাদের ব্যবসায়ীরা চাপ দিচ্ছেন। আমরা আগামীকাল (আজ) আমাদের ব্যবসায়ীদের কথা বলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।
তামাকুমণ্ডি লেইন বণিক সমিতির সভাপতি মো. আবু তালেব দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ১৪ তারিখ থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। এই কঠোর লকডাউনের মধ্যে আবার গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা চলবে। এছাড়া নিয়ম করে কাঁচা বাজার ও মাছ বাজার চলবে। তবে বন্ধ থাকবে বিভিন্ন মার্কেট। আমরা সরকারের কাছে বারবার দাবি জানিয়েছিলাম, সরকার যেন অন্তত রমজান মাসে আমাদের লকডাউন নামের এই গ্যাঁড়াকল থেকে মুক্তি দেয়। কিন্তু সরকার কিছুই শুনেনি। এখন আমরা কার কাছে যাব? কাকে দুঃখের কথা বলব। গত বছর করোনার কাছে হার মেনে আমরা অনেক টাকা লোকসান দিয়েছিলাম। এবারও একই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। সারা বাংলাদেশে ৪ কোটি দোকান কর্মচারী আছে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে না পারলে তাদের বেতন কিভাবে দেবে। এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এখন ব্যবসার সময় ব্যবসা করতে না পারলে কিভাবে ব্যবসায়ীরা বাঁচবে। আমরা সরকারকে নির্দিষ্ট সময় ভ্যাট-ট্যাঙ দিচ্ছি। গত বছর এত খারাপ পরিস্থিতিতে আমরা ভ্যাট ট্যাঙ মাফ পাইনি। ব্যবসায়ীরা আমাদের আন্দোলনের জন্য চাপ দিচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী কেবল ঈদ কেন্দ্রিক ব্যবসা করেন। সারা বছরের মধ্যে ব্যবসা হয় শুধু রমজান মাসে। ঈদ বাজার না হলে সরকারের কাছে আমরা এত অনুরোধ করতাম না। আমরা কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করতে চাই। কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক। ইতোমধ্যে আমরা মাইকিং করেছি, যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করে ব্যবসায়ীরা।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনার কাছে আমরা গত বছর ঈদ বাজার হারিয়ে কোটি কোটি লোকসান দিয়েছি। এখন মনে হচ্ছে, আরেকটি ক্ষতির দ্বারপ্রান্তে ঘুরছি। সরকারের কাছে তাই অনুরোধ জানাবো, দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের দিকে তাকিয়ে যেন লকডাউন চলাকালে সীমিত পরিসরে মার্কেট খুলে দেয়।
বিপণী বিতান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সাগীর বলেন, গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সাথে বৈঠকে বলেছিলেন, কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন দিতে সরকারকে প্রণোদনা দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত গার্মেন্টস এবং শিল্প কারখানা লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। তবে আমাদের কথা হচ্ছে, আমাদেরও কর্মচারী আছে। দোকান বন্ধ থাকলে তাদের বেতন কোত্থেকে দিব? সরকারের কাছে আমরা সৎ মায়ের সন্তান আর গার্মেন্টস মালিকরা আসল মায়ের সন্তান। তারপরেও আমি সরকারের প্রতি আস্থাশীল। আশা করি এই এক সপ্তাহের লকডাউন শেষে সরকার আমাদের বিষয় বিবেচনা করবেন।
সানমার ওশান সিটি ও নাসিরাবাদের ফিনলে স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদ ইফতেখার বলেন, আমরা বারবার সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি-আমাদের এই রমজান মাসে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হোক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা লকডাউনের আওতামুক্ত রেখে মার্কেট লকডাউন দিল। আমরা এই সপ্তাহ দেখতে চাচ্ছি। এরপর সবার সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।