ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ রেখে, মাইকে আওয়াজ তুলে ব্যক্তিগত উৎসব উদযাপন করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত ও মানবিক? আমার ছেলের জন্মের কয়েকমাস আগে নববর্ষ উদযাপনের জন্য পটকা বাজি ফোটানো আরম্ভ হল। রাত ২টা নাগাদ পর্যন্ত চলল। পাশেই মেটারনিটি হাসপাতাল। এই শব্দে দু‘দিন আগে জন্ম নেওয়া শিশু শব্দ সহ্য করতে না পেরে জীবনের কাছে হার মেনে নিল। হার্টের ছোট খাটো সমস্যা নিয়ে জন্মেছিল শিশুটি। কিন্তু আমাদের অতি আবেগী স্বার্থপর আচরণ তাকে ক‘টাদিন বাঁচারও সুযোগ দিল না! অবুঝ শিশুটির কি দোষ ছিল! তার মা বাবারই বা কি দোষ ছিল বিধায় এ শাস্তি পেল? এই ঘটনা যদি তার নিজের সাথে হতো তখন কি সে ব্যক্তি ক্ষমা করতেন? তখন আমি নিজেও ৬মাসের অন্তঃসত্ত্বা। হয়ত ইংরেজি নববর্ষ বলে উল্লেখ করতে পেরেছি ধর্মীয় উৎসবেও রাত পর্যন্ত এমন উচ্চস্বরে শব্দে বাজি কিংবা মাইকেও এমন হয়ে থাকে, কিন্তু সেটা বলাটা হয়ে যাবে মহা অন্যায়।
রাস্তা বন্ধ রেখে ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকে কত রোগী, পরীক্ষার্থী, কত মানুষ কত ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি তার ইয়ত্তা নেই, কিন্তু দেশের একটা বড় অংশের মুখ তালাবন্ধ, নির্বিকার। সেই বিশেষ তালাটির নাম “ভয়“! পাছে লোকে তেড়ে আসে সে ভয়। অতিমাত্রায় ধর্মান্ধ জাতি বিধায় ঈশ্বরকে খুশি রাখছি বলে নিজের ব্যক্তিক ঈশ্বরের নাম দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা করে প্রতিনিয়ত আরেকজন করেছে কেন আমাদের ক্ষেত্রেও করতে হবে বলে গায়ের জোর খাটাচ্ছি। মানে স্বার্থপর আচরণের সাথে পাল্লা দিয়ে স্বার্থপর আচরণ করার অযৌক্তিক প্রতিযোগিতা। আলোকসজ্জা করে, সীমিত আকারে সহনীয় পর্যায়ে মাইক বাজিয়েও নির্ধারিত গণ্ডীতে উৎসব পালন করা যায়। পথঘাট বন্ধ করে, উচ্চশব্দ করে অসুবিধা সৃষ্টি করে উৎসব পালন করতে হবে এটা নিশ্চয়ই পবিত্র গ্রন্থে কোথাও লেখা নেই। ঈশ্বর অবশ্যই চাইবেন উনার প্রিয় সৃষ্টির অসুবিধা সৃষ্টি না করে, সৃষ্টির সেবা জীবের যত্ন নিয়ে তাঁকে স্মরণ করুক!