করোনা পরিস্থিতিতেও থেমে নেই ইয়াবা পাচার। বরং এই করোনা পরিস্থিতির কারণে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যত্র তৎপরতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইয়াবা পাচারে নেমেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। ২৮ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘বিলাসবহুল বাসে আড়াই কোটি টাকার ইয়াবা’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কঙবাজার থেকে ঢাকামুখী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি দূরপাল্লার বাস থেকে আড়াই কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার নগরীর খুলশী থানাধীন দামপাড়া এলাকা থেকে ৫৬ হাজার ৩শ পিস ইয়াবা জব্দ করে র্যাব। এ সময় বাসটির দুই যাত্রীসহ চালক ও সুপারভাইজারকে আটক করা হয়। র্যাবের এএসপি মো. মাশকুর রহমান আজাদীকে জানান, কয়েকজন ব্যবসায়ী কঙবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে দামপাড়ায় অস্থায়ী চেকপোস্ট বসায় র্যাব। পরে সন্দেহজনক একটি বাস থামানোর সংকেত দিলে ৪ ব্যক্তি বাস থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা পাচারের বিষয়টি স্বীকার করে। তাদের দেখানো মতে লাগেজের ভেতর থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার করা হয়।
সাধারণের ধারণা, সর্বনাশা মাদক ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক সংকুচিত হয়ে আসছে। আসলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মরিয়া হয়ে উঠা কিছু কিছু পাচারকারী অভিনব পন্থায় ইয়াবা পাচার করছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার থেমে নেই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মুখে বিপর্যস্ত ইয়াবা সিন্ডিকেটের চিহ্নিত সদস্যরা আত্মসমর্পণের নামে আইন বহির্ভূত সুযোগ নিয়ে সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে চাইছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। অভিযোগ উঠেছে ইয়াবা পাচারকারী চক্রের কিছু কিছু সদস্য জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো তৎপর হয়ে উঠছে এই মাদক পাচারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়াবা পাচারে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। পাচারকারী সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক কঠোর নজরদারির মুখে ছোট হয়ে আসলেও কিছু বেপরোয়া পাচারকারী ঝুঁকিপূর্ণ পন্থা খুঁজছে। ‘মাদকের বাহক’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন বাংলাদেশে বসবাসকারী শরণার্থী রোহিঙ্গারাও। এমনকি দেশেও মাদক পরিবহনে তারা জড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসনের নজর এড়াতে ইয়াবা পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে নারী ও শিশুদেরও। এমনকি বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকও জড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা পাচারে। কখনো পিঁয়াজ, মরিচ, আম, সবজি কিংবা রান্না করা খাবারের ভিতর নিয়ে আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান। কিছুদিন আগে কঙবাজার বিমান বন্দরে এক তরুণী পলিথিনে পেঁচিয়ে পিচ্ছিল পদার্থ মেখে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইয়াবা তার যৌনাঙ্গের ভেতরে করে পাচারের সময় ধরা পড়ে। তরুণীটি কঙবাজার ছেড়ে যাওয়ার জন্য একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের অপেক্ষায় ছিল। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশের বিমান বন্দরগুলোকেও নজরদারির আওতায় নিয়ে এনেছে। আগে মনে হতো স্থল ও সমুদ্র পথে দেশে ইয়াবা পাচার হয়ে আসছে।
ইয়াবা পাচার চক্রের হোতারা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করছে একের পর এক বড় চালান। প্রশাসনের দাবি, ইয়াবা পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। প্রশাসনের তৎপরতার কারণে কূটকৌশল অবলম্বন করার পরও আটক হচ্ছে ইয়াবার চালান।
ইয়াবাসহ মাদক পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স, আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি এবং কঠোর আইনের কারণে বহু পাচারকারী গা ঢাকা দিয়েছে। তারপরও যারা করছে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নতুন পন্থায় মাদক পাচার করছে। সরকারি আইন অনুসারে কোনো পাচারকারীর কাছে পাঁচ গ্রামের বেশি কোকেন-হেরোইন জাতীয় মাদক পাওয়া গেলে এবং কোনো পাচারকারীর কাছে দুই হাজার পিসের বেশি ইয়াবা পাওয়া গেলে সেই ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে মাদকের চাহিদা আছে তাই সরবরাহও আছে। সরবরাহ বন্ধ করা না গেলে চাহিদা বাড়তেই থাকবে। তাই সরবরাহের পথ বন্ধ করতে হবে। মাদক পাচার প্রতিরোধ এবং এর কারবারিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।