কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জাপানের নিপ্পন কোয়ে এবং দেশীয় ডিডিসি নামের কোম্পানি যৌথভাবে বহুল প্রত্যাশার এই বন্দর নির্মাণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। অন্যদিকে ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড নামের অপর একটি কোম্পানিকে প্রকল্পের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কার্যক্রমের পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই সংক্রান্ত দুইটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মাতারবাড়ী বন্দরের পক্ষে প্রকল্প পরিচালক এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (এডমিন এন্ড প্ল্যানিং) মোহাম্মদ জাফর আলম এবং নিপ্পন কোয়ের প্রতিনিধি নাওকি কুড়ো স্ব স্ব পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যক্রমের ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম এবং ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে শুনজি ইউশিহারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
নিপ্পন কোয়ে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের যাবতীয় ডিজাইন ব্যয় নির্ধারণ, টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরি এবং অবকাঠামোগত নির্মাণের বিষয়গুলো মনিটরিং ও তদারকি করবে। পরবর্তী সময়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বন্দর চালু করে দেয়ার বিষয়টি সমন্বয় করবে। বন্দর চালু হওয়ার এক বছর পর্যন্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাপোর্ট দেবে। এক্ষেত্রে ব্যয় হবে প্রায় ২৩৪ কোটি টাকা।
অপরদিকে ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পের (বন্দর সংযোগ সড়ক অংশ) সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কার্যক্রম সংক্রান্ত পরামর্শ দেবে। এজন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটিকে ৪৬৬ কোটি টাকা দেয়া হবে।
এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহরিয়ার হোসেন, জাইকার চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউহো হায়াকাওয়া, বাংলাদেশের জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইকি ইয়ামায়া উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেয়া পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে আমাদের অধিকার আরও বেশি শক্তিশালী হবে। সুনীল অর্থনীতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে মাতারবাড়ী বন্দর নতুন উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাবে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমুদ্র সম্পদ ও বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মাতারবাড়ী বন্দর সহায়ক হিসাবে কাজ করবে। মাতারবাড়ী বন্দরের বাস্তবায়ন একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, মাতারবাড়ী বন্দরের প্রথম পর্যায়ের কার্যক্রম ২০২৬ সালে সম্পন্ন হবে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে মাতারবাড়ী বন্দরে ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। প্রায় ৮ হাজার টিইইউএস কন্টেনার (বিশ ফুট দৈর্ঘের কন্টেনার) নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে মাতারবাড়ী বন্দরে। ফলে সামগ্রিক পরিবহন ব্যয় কমবে আনুমানিক ১৫ শতাংশ।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় মাতারবাড়ী ও ধলঘাট এলাকায় বন্দরটি নির্মিত হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করবে। মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মাতারবাড়ী বন্দরের অংশ এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের সড়ক অংশ বাস্তবায়ন করবে।