বাংলাদেশকে এত কম সময়ে এত বেশি মৃত্যু আর কখনও দেখতে হয়নি মহামারীর ১৬ মাসে। ২৭ জুন থেকে ৪ জুলাই, এই আট দিনে করোনাভাইরাসে মোট ১০১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে দেশে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ হাজারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে গতকাল। খবর বিডিনিউজের।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ২৬ জুন দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১৪ হাজার অতিক্রম করে। সেই তালিকায় নতুন এক হাজার নাম যোগ হতে সময় লেগেছে মাত্র আট দিন। এর আগে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে গত এপ্রিলে ১০ দিনে ১ হাজার কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। এতদিন সেটাই ছিল সবচেয়ে কম সময়ে হাজার মৃত্যু।
মার্চের মাঝামাঝি থেকে মে’র মাঝামাঝি ওই নাজুক সময়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সব রেকর্ড নতুন করে লিখতে হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে। তবে মধ্য মে পার করে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত রোগীর হার ৬ শতাংশে নেমে আসায় অনেকে আশা দেখতে শুরু করেছিলেন। ভেবেছিলেন করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ বাংলাদেশ হয়ত পেরিয়ে এসেছে। কিন্তু এ ভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন জুনের মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার নিয়ে যায় ১৫ শতাংশের উপরে। আর গতকাল তা প্রায় ২৯ শতাংশে পৌঁছেছে।
ভয়ঙ্কর এই আট দিনের প্রতিদিনই শতাধিক মৃত্যুর খবর এসেছে। গত বছর রেকর্ড ২৭ জুলাই ১১৯ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ১ জুলাই সেই রেকর্ড ভেঙে ১৪৩ জনের মৃত্যুর খবর আসে। আর গতকাল ১৫৩ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় সরকারের বুলেটিনে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ।
হাজার মৃত্যুর এই আট দিনে সব মিলিয়ে ৬১ হাজার ৭৭৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে। এত কম সময়ে এত বেশি রোগী আর কখনও শনাক্ত হয়নি মহামারী শুরুর পর। এই আট দিনের মধ্যে পাঁচ দিনই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল আট হাজারের বেশি। তার মধ্যে ৩০ জুন রেকর্ড ৮৮২২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় গত সোমবার থেকে কঠোর বিধিনিষেধে দেশ অচল রেখে সংক্রমণ রোখার পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে সরকারকে। রাস্তায় বের হয়ে যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় প্রতিদিনই গ্রেপ্তার হচ্ছে কয়েকশ মানুষ।
দেশে এ পর্যন্ত যে ১৫ হাজার ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১০ হাজার ৬৭৬ জন। নারী ৪ হাজার ৩৮৯ জন। শতকরা হিসাবে পুরুষ ৭০.৮৭ শতাংশ, নারী ২৯.১৯ শতাংশ। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৃতদের ৫৬ শতাংশই ষাটোধ্বর্ব, ২৪ শতাংশের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। ২০ বছরের নিচে বয়সীদের মৃত্যুর হার ২ শতাংশের কম।