কাতার বিশ্বকাপে যে দলটি সিংহের মতোই হুঙ্কার দিয়ে এগুচ্ছে সেটি হলো নিঃসন্দেহে মরক্কো। মরক্কো জাতীয় ফুটবল দলের নিকনেম ‘দ্য অ্যাটলাস লায়ন্স’। প্রথম পর্ব, শেষ ষোলো ও কোয়ার্টার ফাইনালের চৌকাঠ পেরিয়ে তারা এখন সেমিফাইনালে। শেষ চারে নাম লেখানোর মধ্যে দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে তারা। সে ইতিহাস কেবল মরক্কোর নয়, পুরো আফ্রিকার। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম দল মরক্কো।
আরব দেশের সদস্য দেশটির এ কীর্তিগাথায় আন্তর্জাতিক ফুটবলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে আফ্রিকা। নিজেদের এবং আফ্রিকার ফুটবলকে আর কত উঁচুতে তুলতে পারবেন তারা তা নিশ্চয় সময়ই বলে দেবে। আরো কিছু পেলে সেটা নতুন অর্জন হবে তাদের। আর কিছু পাওয়ার নেই, খেলে যাও বুক চিতিয়ে- এই মন্ত্রে এখন বিশ্বাসী মরক্কো। আর সেই বিশ্বাস নিয়েই মরক্কো সেমিফাইনালে খেলতে নামবে ফ্রান্সের বিপক্ষে। ১৯৯৮ ও ২০১৮ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে মরক্কো কি পারবে নিজেদের আফ্রিকার ফুটবল ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে? না পারলেই আর কী? নতুন ইতিহাস গড়া তো হয়েই গেছে তাদের।
পরের যা কিছু অর্জন হবে, তা পালক হয়ে যোগ হবে ইতিহাসের মুকুটে। ফুটবল দিন শেষে গোলের খেলা। জয়ী দলটিকেই মনে রাখে সবাই। কিন্তু হেরে গেলেও ফুটবল ইতিহাসে লেখা হয়ে থাকবে মরক্কোর নামটি। পুরো আফ্রিকা তাদের বাহবা দেবে ততদিন, যতদিন না ওই মহাদেশের অন্য কোন দেশ তাদের অর্জনকেও ছাড়িয়ে যাবে। রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে ক্রোয়েশিয়াকে সম্ভাব্য ফাইনালিস্ট হিসেবে বাজি ধরার মতো কেউ ছিল না।
যেমন ছিল না এই বিশ্বকাপে মরক্কোকে শেষ চারে দেখারও। এখন অনেকের মুখেমুখে মরক্কোর নাম। অনেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালটা মরক্কো এবং আর্জেন্টিনা বা ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে হলে হতেও পারে। ফুটবল অবশ্য এইসব সমীকরণ মানে না। দিন যার, ম্যাচ তার। এই বিশ্বকাপে মরক্কোর জালে প্রতিপক্ষরা বল পাঠাতে পারেনি। গ্রুপ পর্বে কানাডার কাছে একটি গোল তারা খেয়েছিল সেটা ছিল আত্মঘাতি। আরো মজার তথ্য হলো, এই বিশ্বকাপে কোন ম্যাচতো নয়-ই, এমন কি তারা আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বশেষ ১০ ম্যাচের একটিও হারেনি।
টানা ৫ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল মরক্কো। বিশ্বকাপে টানা ৫ ম্যাচ অপরাজিত থাকায় না হারা সংখ্যাটা এখন ১০। এ বছর জুনে তারা সর্বশেষ ম্যাচ হেরেছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচটিতে তারা ৩-০ গোলে হারার পর থেকে অদম্য। সর্বশেষ ১০ ম্যাচের ৭ টি জিতেছে তারা। ড্র করেছে তিন ম্যাচ। বিশ্বকাপের শেষ ষোলতে স্পেনকে টাইব্রেকারে হারানো ম্যাচটি ড্র। একটি আত্মঘাতিসহ ১০ ম্যাচে মরক্কো গোল খেয়েছে মাত্র ২ টা।
এই তথ্যটাই বলে দিচ্ছে মরক্কোর রক্ষণ কতটা শক্তিশালী। সেমিফাইনালে যাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ সেই ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশমও মনে করিয়ে দিয়েছেন মরক্কোর একটির বেশি গোল না খাওয়ার কথা। আফ্রিকার দলটির সেমিফাইনালে ওঠাতে তিনি অবাক হননি। এখন দেখার বিষয় সেমিফাইনালে দেশমকে অবাক করে দিতে পারে কিনা আফ্রিকার অদম্য সিংহরা।