অদ্ভুত অন্ধকার চারপাশে। অন্ধকার এতোটা তীব্র হয় আমি দেখিনি আগে। এতটুকু ছিটেফোঁটা আলো নেই যার ওপর নির্ভর করে চোখ খুঁজে পাবে কিছুটা আশ্রয়। বড় বেশি ক্লান্ত হয়ে ওঠে চোখ আলো খুঁজতে খুঁজতে। অন্তত একটা অবয়বকে দেখার চেষ্টা। আর কিছু নয়। ওই অদ্ভুত আঁধারে বাবা বলে চলেছে তোমার গল্প। তোমায় হারিয়ে ফেলার গল্প। মজার ব্যাপার হলো গল্পটা আমার প্রায় শতবার শোনা হয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিবারই একটা জায়গায় এসে আমি আর মনোযোগ রাখতে পারি না। খুব আশ্চর্য্যজনকভাবে আমি ওই একটা জায়গা থেকেই নিজের মতন করে অন্য আরেকটা গল্প তৈরি করতে থাকি। গল্পের অর্ধেকটায় চলে আসে তোমায় হাসপাতালে নেয়ার কথা। আমিও বাবার হাত ধরে ঢুকে যাই হাসপাতালে। যে যন্ত্রটাতে বারবার ভেসে উঠছে তোমার একটু একটু করে চলে যাওয়া, একটা একটা করে শেষ নিঃশ্বাসটা নিয়ে নেবার যে যন্ত্রটা? জানো? আমি না ওখানে যাই? তারপর চুপটি করে যন্ত্রটা উল্টে দি। মুহূর্তেই ভেসে ওঠে তোমার মৃদু হাসিমুখ। এইতো, এইতো তুমি শ্বাস নিচ্ছ। আশ্চর্য! ঘড়িটাও পাল্টে যায় খুব সন্তর্পণে। ঘণ্টার কাঁটাটা ছিলো ৩টায়। রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টা হয়ে গেলোতো। এইতো দেখো না সকালের তীব্র আলো। ওই আলোতে কখনো যমদূত আসতে পারে? কক্ষনো পারে না। দেখো না পর্দাটা সরিয়ে। দেখো আমরা হাত ধরাধরি করে স্কুল যাচ্ছি। এতো দৌঁড়ঝাপ, তুমি কি চিনতে পারছো মা? কোন শিশুটা তোমার রুদ্মিলা? কৃষ্ণচূড়ার আর সোনালুর হাট বসেছে আজ পাহাড়ের ওই স্কুলটাতে। তুমি খুলে দাও চুল ছোট্টবেলার মতন। তোমার মনে আছে মা, আজ তুমি স্নানের পরে চুলটা শুকনোর সময়টুকুও পাওনি। খুলে দাও চুল, উড়িয়ে দাও হাওয়ায়। তোমার ক্লান্ত মুখটা আমি আরেকবার দেখি। আমায় পিছু ফিরে চাইতে দাও মা একবার। শুধু একবার তোমার ক্লান্ত মুখটা আমাকে কাঁদাক। আমি অস্থির হই। ছুটে এসে তোমায় কিছু বিশ্রাম দি। তোমায় চুমু খাই। একবার শুধু একবার ফিরিয়ে দাও সময়।